আল-কায়েদার দায় স্বীকার অভিজিতের এক প্রকাশক খুন পাঞ্জা লড়ছেন আরেকজন  

Slider জাতীয়

99412_f1

 

 

 

 

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিতের এক প্রকাশককে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরেকজন। দুই ব্লগারের ওপরও হামলা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় প্রায় একই সময়ে দুটি হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি হামলাই ঘটেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে। যারা ব্লগার অভিজিৎসহ মুক্তমনা অনেক লেখকের বই প্রকাশ করেছিল। গত বইমেলায় অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা। একই কায়দায় গতকালও কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে। এ হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর ব্যস্ততম আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায়। এদিকে লালমাটিয়া এলাকায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করা হয় ওই প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিন লেখক ও ব্লগারকে। অপর দু’জন হলেন ব্লগার ও লেখক সুদীপ কুমার বর্মণ ওরফে রণদীপম বসু ও তারেক রহিম। হতাহত দুই প্রকাশকও ব্যবসার পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দুটি ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় দুটি ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি সংগঠন। তারা নিজেদের আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা দাবি করে। যদিও ওই বার্তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে প্রায় একই সময়ে দুই হামালার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। নিহত দীপনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মেডিকেল মর্গে রাখা হয়েছে। আর আহত টুটুল ও তারেক রহীমকে হাসপাতালের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবং রণদীপম বসুকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। একই দিনে পৃথক ঘটনায় দুই প্রকাশকসহ চার ব্লগারের ওপর হামলার ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আলমত সংগ্রহ করেন। পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি পরিকল্পিত হামলা। দুই প্রকাশকই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করেছিলেন।

পুলিশ, হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে শাহবাগের ব্যস্ততম আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার ফয়সাল আরেফীনকে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যাকা-ের অন্তত আড়াই ঘণ্টা পর বিষয়টি জানাজানি হয়। জাগৃতি প্রকাশনীর ম্যানেজার আলাউদ্দিন জানান, আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ১৩১ নম্বর কক্ষে জাগৃতি প্রকাশনীর অফিস এবং নিচতলায় এর বিক্রয়কেন্দ্র। শনিবার দুপুর ১টার দিকে প্রকাশকের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। এরপর দীপন তিন তলার অফিসে চলে যান। বিকালে ৫টার দিকে তিনি প্রকাশক টুটুলের ওপর হামলার খবরটি জানতে পারেন। বিষয়টি শুনে তিনি তার প্রকাশকের খোঁজ নিতে মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ পেয়ে দৌড়ে ওপরে ওঠেন। সেখানে গিয়ে দেখেন কার্যালয়ের দরজা বন্ধ, কিন্তু ভেতরে লাইট জ্বলছে ও ফ্যান ঘুরছে। এসময় তিনি মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারি ও নিজেদের কম্পিউটার অপারেটরকে ফোন করে ডাকেন। তারা সবাই মিলে দরজার লক ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকেন। তখন দীপনকে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় উপুর হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। চারপাশে রক্ত জমাট বাধা ছিল। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটা থেকে ৪টার মধ্যে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তা না হলে রক্ত জমাট বাধার কথা নয়। হত্যাকা-ের সময় নিহত দীপন একাই তার কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অনারারি শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক জানান, দুপুরে দীপন তার পরীবাগের বাসায় গিয়েছিলো। সেখানে তারা একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান। এরপর সাড়ে ৩টা থেকে একটু পরপর ক্রমাগত ফোন করলেও সে ধরেনি। পরে তার অফিসে এসে কার্যালয়ের সাটার খোলা কিন্তু দরজা বন্ধ দেখতে পান। আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘অনেকবার নক করার পরও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ভেবেছি আশেপাশে কোথাও গেছে। পরে তার বাসায় গেছি। তার স্ত্রী অভিজিতের বই প্রকাশকারী অন্যান্য প্রকাশককের ওপর হামলার কথা বললে তিনি আবারও আজিজ মার্কেটে ফিরে আসেন। পরে পিয়ন ও ম্যানেজার নিয়ে নিচ থেকে চাবি এনে খুলে ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ছেলে হত্যার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি জানি এই হত্যাকা-ের বিচার আমি পাবো না। অন্যান্য হত্যাকা-ের মতোই এই হত্যাকা-ও অনুদ্ঘাটিত থেকে যাবে। নিয়ম মেনে হয়তো মামলা করতে হবে। সরকার হত্যাকারীদের কিছুই করতে পারছে না। জানা গেছে, নিহত দীপনের মা ফরিদা প্রধানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের সিনিয়র চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ওই হলের আবাসিক কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি। হৃদিত ফারহান ও হৃদমা আদনান নামে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তারা দুজনই উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থী। ছেলে হৃদিতের আজ জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের কথা রয়েছে। আজিজ সুপার মার্কেটের লণ্ঠন নামে এক কাপড়ের দোকানের মালিক বলেন, ঘটনার সময় জাগৃতি প্রকাশনী ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিল। প্রথমে তার দোকানের কর্মচারী নক করার পর না খোলায় নিচ তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর শোরুম থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে এ ঘটনা দেখতে পান। এদিকে এ ঘটনার পরপরই আজিজ সুপার মার্কেটের দোতলা ও তিন তলার সকল দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। ৭টার দিকে ঘটনার প্রতিবাদে গণজাগরন মঞ্চ আজিজ সুপার মার্কেটের আশেপাশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে মার্কেটের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে আজ বিকাল ৩টায় সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। শাহবাগ চত্বরেও একই কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয় তারা।

বই কেনার ছলে শুদ্ধস্বরের অফিসে ঢোকে দুর্বৃত্তরা: পুলিশ, হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লালমাটিয়ার সি ব্লকের ৮/১৩ নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়। গতকাল দুপুরে শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুল রশীদ চৌধুরী টুটুল, রণদীপম বসু ও তারেক রহীম বসে কথা বলছিলেন। এসময় ওই কার্যালয়ে শুদ্ধস্বরের অফিস সহকারী রাসেল ও বিডিনিউজ পাব্লিকেশনন্স লিমিটেডের (বিপিএল) প্রোডাকশন অ্যাসিস্টেন্ট ওয়াফিকুল হক শক্তি উপস্থিত ছিলেন। রাসেল ও শক্তি বলেন, তারা কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষের সোফায় বসে ছিলেন। দুপুর সোয়া ২টার একটু পর বাইরে থেকে কেউ একজন দরজা নক করে। এসময় রাসেল দরজা খুলে দিলে ত্রিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে শুদ্ধস্বরের বই কিনবে বলে জানায়। অজ্ঞাত ওই দুর্বৃত্ত রাসেলের হাতে একটি লিস্টও ধরিয়ে দেয়। রাসেল সেই লিস্ট নিয়ে দেখার মুহুর্তে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি তার এক ছোট ভাই বাইরে আছে বলে নিজেই দরজা খুলে দেয়। আনুমানিক ২০-২২ বছরের ওই যুবক ভেতরে ঢোকা মাত্রই অস্ত্র হাতে রাসেল ও শক্তিকে জিম্মি করে সোফায় বসিয়ে রাখে। এরপর তৃতীয় তরুণ ভেতরে প্রবেশ করে। তার হাতেও আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতি ছিল। প্রথম ব্যক্তি ও তৃতীয় ব্যক্তি সোজা টুটুলের অফিস কক্ষে ঢুকে যায়। অপর যুবক রাসেল ও শক্তিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। শক্তি জানান, কয়েক সেকেন্ডের মাথায় তারা ভেতর থেকে চিৎকার শুনতে পান। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। এর কয়েক মুহুর্ত পরেই তারেক রহিম দৌড়ে অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে তাদের সোফার সামনে এসে পড়ে যান। তার মাথা ও শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। এসময় তাদের জিম্মি করে রাখা দুর্বৃত্ত তারেক রহীমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সুযোগে শক্তি দৌড়ে ভেতরের একটি বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেন। প্রত্যক্ষদর্শী শক্তি জানান, তিনি বারান্দায় গিয়ে ভয়ে একটি লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা বেরিয়ে গেলে তিনি অভ্যর্থনা কক্ষে ফিরে এসে তারেক রহীমকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় তারা চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার সময় কার্যালয়ের বাইরে থেকে দরজা তালাবন্ধ করে পালিয়ে যায়। শক্তি জানান, তারা দুজনে চিৎকার করতে করতেই টুটুলের অফিস কক্ষের দরজা খুলে দু’জনকেই পড়ে থাকতে দেখেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে দরজা খুলে দেয়ার কথা বললেও কেউ খোলেনি। পরে তিনি নিজের  অফিসের এক সহকর্মীকে ফোন করে ঘটনা জানিয়ে সহযোগিতা চান। তার কাছ থেকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠান। ইতোমধ্যে বাইরে থেকেও খবর পেয়েও মোহাম্মদপুর থানার এক দল পুলিশ ওই বাসায় যায়। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল জানান, ঘটনার তিনি বিষয়টি প্রথমে টুটুলের স্ত্রী শামিমা লুনাকে জানান। এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে। পরে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক সার্জন রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, তিন জনের মাথা, হাত ও শরীরে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। একমাত্র তারেক রহীমের বাম পাঁজরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। রণদীপম বসু আশংকামুক্ত হলেও অপর দু’জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

আহত আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলের স্বজনেরা জানান, ব্লগার অভিজিৎ হত্যার পর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন টুটুল। কিন্তু প্রথম দিকে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিলেও পরবর্তীতে আর কোনও খোঁজ নেয়নি। স্বজনেরা জানান, আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল হত্যাকা-ের শিকার ব্লগার অভিজিৎ রায়ের একাধিক বই প্রকাশ করেছেন। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশক টুটুলসহ অভিজিৎকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। দুর্বৃত্তদের হামলার ভয়ে টুটুল তার চলাফেরা সীমিত করে এনেছিলেন। কাঁটাবনের কনকর্ড টাওয়ারের তার বইয়ের শো-রুমটিও অনেকদিন ধরে বন্ধ ছিল। টুটুলের বাবার নাম টিএইচ চৌধুরী। আহত টুটুল জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই অস্ত্রধারী কয়েক যুবক তার কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাথারী হামলা চালায়। হামলাকারীরা জঙ্গি গোষ্ঠী বলেও তিনি মন্তব্য করেন। টুটুলের ভাষ্য, অভিজিৎসহ অন্যান্য ব্লগারদের যারা হত্যা করছে তারাই তাকে হত্যা চেষ্টা করেছিল।

জানা গেছে, সুদীপ কুমার বর্মণ ওরফে রণদীপম বসু সচলায়তন ব্লগের নিয়মিত লেখক। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তার অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে। রণদীপম বসু জানান, শুদ্বস্বর প্রকাশনী থেকে এর আগে একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। আগামী বই মেলায়ও তার একটি বই প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। ওই বই নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি প্রায়ই শুদ্ধস্বরের ওই কার্যালয়ে যাতায়াত করতেন। গতকাল বই নিয়ে আলোচনার সময় অতর্কিত হামলা করা হয়। রণদীপম বসুর বাবার নাম অনীল চন্দ্র বর্মন। তিনি মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ের পাশে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। হামলার খবরে গতকাল রাতে সুনামগঞ্জেও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। অপরদিকে সচলায়তন ব্লগের আরেক ব্লগার তারেক রহীম পেশায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী। ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তারেক রহীমও সচলায়তন ব্লগে নিয়মিত ব্লগ লিখতেন। তার বাবার নাম তাহের চৌধুরী। এ্যালিফ্যান্ট রোডের ১৯৪/১ নম্বর জজ গলির দ্বিতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি।

সরেজমিন শুদ্ধস্বরের কার্যালয়: এদিকে লালমাটিয়ার হামলার ঘটনার পর শুদ্বস্বরের ওই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্থ তলার একদিকে শুদ্বস্বরের কার্যালয় ও আরেক দিকে একটি ফ্ল্যাট বাড়ি। ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটে পরিবার, একাধিক বেসরকারী সংস্থার অফিস রয়েছে। বাড়ির নিচতলায় একটি কোচিং, একটি মেডিটেশন সেন্টার ও একটি সারেগামার স্কুল রয়েছে। ওই বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। যেকেউ ভবনের ওপরে উঠে যেতে পারতো। শুদ্বস্বরের কার্যালয়টি চার কক্ষের। অফিসের ঢুকতেই অভ্যর্থনা কক্ষ। সোফার সামনে জমাট বাঁধা রক্ত পড়ে আছে। বামপাশের কক্ষটিতে কাঁচের সেলফের বিশাল লাইব্রেরী। ওই কক্ষটিতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লক্ষ্য করা গেছে। তার পাশের কক্ষটিতে দুটি টেবিল ও একাধিক চেয়ার আছে। ওই কক্ষটিতে মূলত অফিসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বসতেন। আর দুইটি কক্ষে বইয়ের পান্ডুলিপি ও কাগজ রাখা হতো। অফিসটি সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকতো। হত্যাচেষ্টার খবর পেয়ে ডিএমপির ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এছাড়াও ডিবি, র‌্যাব, পিবিআইসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত হন। জিম্মি করে তিনজনকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় ওই এলাকায় স্থানীয় অধিবাসীরা ভিড় করেন। তাদের ভিড় সামলাতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। ওই অফিসের পাশের ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী ফুলমতি জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি পাশের ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার ও চেচামেচি শুনতে পায়। নিচে কোচিং ও গানের স্কুল থাকার কারণে অনেক সময় চিৎকারের শব্দ শুনি। ওই চিৎকারকে ওমনই মনে হয়েছিল। তবে সেটি অনেকক্ষন ধরে হওয়ার কারণে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেখি বামপাশের ফ্ল্যাটের মূল দরজায় তালা মারা। কিন্তু, ভেতর থেকে চিৎকার আসছিল ‘বাঁচাও, বাঁচাও, উদ্ধার কর, দরজা ভাঙ্গো, পুলিশকে খবর দাও..’। গৃহকর্মী বলেন, বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানান তিনি। ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মুরশেদ জানান, গৃহকর্মী চিৎকার দিয়ে আমাকে বলে যে, পাশের ফ্ল্যাটে কোন একটা বিপদ হয়েছে। বাইরে থেকে তালা মারা। আমি তখন দ্রুত নিচে যায় বাড়ির কেয়ারটেকারে খোঁজে। নিচে গিয়ে বাড়ির কেয়ারটেকারকে পাইনি। নিচে থেকে দেখি যে, আহত একজন বারান্দার জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে ‘বাঁচাও- বাঁচাও’ বলছে। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন থানা পুলিশকে খবর দেয়। থানা পুলিশ বাড়িতে এসে দরজার তালা ভেঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাড়ির পাঁচতলার ভাড়াটিয়া ইজাজ আহমেদ জানান, প্রথমে মনে হয়েছিল যে, কে কাউকে ডাকাডাকি করছে। কিন্তু, ওই অফিসের দরজার সামনে এসে দেখি যে, ভেতর থেকে অনুরোধ করে বলা হচ্ছে দরজা ভাঙ্গুন, আমাদের উদ্ধার করুন। হাসপাতালে নিয়ে যান। বাড়ির কেয়ারটেকার আলামিন জানান, বাড়ির গেট সবসময় খোলা থাকে। অফিস একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে সর্বসময় লোকজনের যাতায়াত ছিল। একজন নিরাপত্তারক্ষী রাতের বেলায় দায়িত্বপালন করে। কিন্তু, খাবারের সময় ওই নিরাপত্তা রক্ষী থাকেনা। খুনীরা ওই সময়টি তাদের কিলিং মিশনের জন্য বেছে নিয়েছে বলে তিনি জানান।

নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছিলেন টুটুল: ব্লগার অভিজিৎ হত্যার পর মোহাম্মদপুর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন প্রকাশক টুটুল। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জিডি দায়ের করেন। এরপর থেকে পুলিশ নিয়মিত তার বাসা ও অফিসে নিরাপত্তা দিত। পুলিশের দাবি, টুটুলের অনুরোধেই তার নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়। গতকালও ওই জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মেডিকেল আসেন। তবে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তার দাবি, টুটুল পুলিশি নিরাপত্তায় বিব্রতবোধ করতেন। একারণে গত কয়েকমাস তাকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছিল না। এদিকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই টুটুলের নিরাপত্তা চেয়ে জিডির বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন। গতকাল ঢাকা মেডিকেলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান জানান, জিডির বিষয়টি তার জানা নেই। মোহাম্মদপুরের ওসি জামাল উদ্দিন মীরও একই সুরে জিডির বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, জিডি করা হয়েছিল কিনা তা নথিপত্র দেখে বলতে হবে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘জিডি দায়েরের বিষয়টি আমার জানা নেই। কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।’ তবে আহত টুটুলের স্ত্রী শামীমা লুনা বলেন, অভিজিত হত্যাকা-ের পর তার স্বামী হুমকি পেয়ে থানায় জিডি করেছিল। গত কয়েক মাস ধরে তাকে অপরিচিত লোক অনুসরণ করছিল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দিয়ে আসছিল।

পুলিশ কর্মকর্তারা যা বললেন: টুটুলসহ তিন জনের ওপর হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছুটে যান পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে তালা ভেঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কেন তাদের ওপর হামলা করা হলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক কোন তথ্য দেয়া যাচ্ছেনা। লালমাটিয়া এলাকা একটি আবাসিক এলাকা হওয়ার কারণে সর্বক্ষন নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর থাকে বলে তিনি জানিয়েছেন। পৃথক দুই ঘটনার পর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। ডিএমপি কমিশনার ঘটনার পর সাংবাদিকদের এড়িয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যান। তবে অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, বই কেনার কথা বলে শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে তিন দুর্বৃত্ত ঢুকেছিল। তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। রাত ৮টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক। সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের তারা বলেন, সামনে দুটি ফাঁসির রায় কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। এটা তার আলামত হতে পারে। এগুলো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এদের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না আমি সেটা মনে করি না। বাহিনীগুলো চূড়ান্তভাবে কাজ করছে।

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি: একজন প্রকাশক খুন ও তিন ব্লগারের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন, ব্লগারদের নিয়ে একধরণের রাজনীতি চলছে। আমরা এই ঘটনায় আতঙ্কিত নই, ক্ষুব্ধ। ইমরান বলেন, এ ঘটনাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা স্পষ্ট। আমি মনে করি, সরকারের ভেতরে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যার পর আসামীদের ধরে আবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের ভেতরের একটি অংশ এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে আশ্রয় দিচ্ছে। এজন্য সরকার কিছু করতে পারছে না। ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘কোনও মানুষই এখন আর নিরাপদ নয়। আগে ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছিল, এখন মুক্তমনা প্রকাশকদেরও হত্যা করা হচ্ছে। বিদেশি নাগরিক কিংবা মায়ের পেটের শিশু কেউই রক্ষা পাচ্ছে না।’ আজ গণজাগরণ মঞ্চ বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবে বলেও জানান তিনি। ব্লগার ও প্রকাশক রবিন আহসান ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, দিনে দুপুরে প্রকাশকসহ তিনজনকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কেউ নিরাপদ নই। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত বিচার করা প্রয়োজন। এর আগে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে শতাধিক ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চেরকর্মী হাসপাতাল ও শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে।

আল-কায়েদার দায় স্বীকার: প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল ও ফয়সাল আরেফিন দীপনের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা। আনসার আল ইসলাম ৪ নামে এক টুইট বার্তায় ও রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় এ দায় স্বীকার করা হয়। যদিও ওই বার্তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। নিজেদের আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) দাবি করে ওই টুইটে বলা হয়েছে, ‘আমরা, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এই অপারেশনের দায় স্বীকার করছি।’ এতে বলা হয়, আল্লাহর রাসূল ও দ্বীন ইসলামের সম্মান রক্ষার্থে পরিচালিত প্রতিশোধমূলক এই হামলার সম্পূর্ণ দায়ভার গ্রহণ করছি। আনসার আল ইসলাম এর মুখপাত্র মুফতি আবদুল্লাহ আল আশরাফ এর নামে পাঠানো ওই বার্তায় ইসলাম বিদ্বেষীদের হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়। দায় স্বীকার করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মুরতাদ আহমেদুর রশিদ টুটুল তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘শুদ্ধস্বর প্রকাশনী’ থেকে ২০১০ সালে কুলাঙ্গার অভিজিৎ রায় (যাকে  ইতিমধ্যেই মুজাহিদিনরা কতল করেছেন) এবং ব্লগার রায়হান আবিরের (মুজাহিদিনের ভয়ে পলাতক) যৌথভাবে লিখিত ইসলামবিদ্বেষী বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ ছাপানোর মধ্য দিয়ে সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে ছাপানোর দায়িত্ব  আহমেদুর রশিদ টুটুলের ‘শুদ্ধস্বর প্রকাশনী’ থেকে নিজের কাঁধে নেয় ফয়সল আরেফিন দীপনের ‘জাগৃতি প্রকাশনী। এখনো তার প্রকাশনী থেকেই বইটি ছাপানো হচ্ছে। এই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটিতে সরাসরি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর অবমাননা করা হয়েছে। এছাড়াও ফয়সল আরেফিন দীপনের ‘জাগৃতি প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটিতে রাসূল (সা.) কে অবমাননা করা হয়েছে।’ আল-কায়েদার দায় স্বীকারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ দায় স্বীকার নিয়ে দুটি বিষয়ে কাজ করছে। এর একটি হচ্ছে, এর কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে কারিগরি দিক নিয়ে। যেমন কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে, কখন পাঠানো হয়েছে, কে পাঠিয়েছে। ঘটনার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরাও কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

ঢাকা মেডিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ: প্রকাশক-ব্লগারদের ওপর হামলার পর আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ অবস্থায় আহতদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে কৌশলে আবারো হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল এলাকায় সন্দেহভাজন লোকজনকে তল্লাসি করা হচ্ছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে বিভিন্ন সময় ব্লগার হত্যাচেষ্টার পর খুনিরা হাসপাতালে গিয়েও মৃত্যু নিশ্চিত করতে কৌশলে হামলার চেষ্টা করেছিল বলে তথ্য রয়েছে। একারণেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

একই কায়দায় হামলা: রাজধানীর লালমাটিয়ায় এক প্রকাশক-ব্লগারসহ তিন ব্লগারকে হত্যাচেষ্টা ও আজিজ সুপার মার্কেটে এক প্রকাশক-ব্লগারকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করেছিলেন। এ কারণে উগ্রপন্থি ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীরা দুই প্রকাশককেই বিভিন্ন সময়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও মনে করছেন, এ কারণেই দুই প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। লালমাটিয়ার হামলায় টুটুলকেই হত্যার টার্গেট ছিল। কিন্তু ঘটনাক্রমে আরও দুই ব্লগার সেখানে উপস্থিত থাকায় তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, অভিজিৎসহ ব্লগার হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত চক্রই এক প্রকাশককে হত্যা ও তিন প্রকাশক-ব্লগারকে হত্যাচেষ্টা করেছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকালের দুটি ঘটনাতেও আগের মতো ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলার সময় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হলেও ধারালো চাপাতি দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়। কেবল তারেক রহীমের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, হামলার সময় তারেক রহীম দৌড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে যাওয়ায় তাকে গুলি করা হয়েছে। এ ছাড়া শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপনকেও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, উগ্রপন্থি ধর্মীয় কোন গোষ্ঠীর ছোট ছোট সিøপার সেলের দুটি পৃথক দল দুই প্রকাশককে হত্যাকা-ের মিশন নিয়ে মাঠে নামে। তারা হত্যাকা-ের পর একই কায়দায় দুই কার্যালয়ের মূল দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এদিকে একই দিনে দুই প্রকাশনী সংস্থায় হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা ও তিনজনকে আহত করার বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বিব্রত হয়ে পড়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও এর আগের একাধিক ব্লগার হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হতাহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলে যান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, দুটি হত্যাকা-ই পরিকল্পিত বলে তাদের মনে হচ্ছে। এ হত্যাকা- ও হত্যাচেষ্টার পেছনে কারা রয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *