রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গ্রাম-বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া একটি উৎসবের নাম ‘পলো উৎসব’। কেউ কেউ আবার ‘পলো বাওয়া উৎসব’ বলে থাকেন।
এটি গ্রামীণ বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য। যেখানে সম্মিলিত মানুষ মনের আনন্দ নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশে হাঁটু পানিতে নামেন।
হাইল-বিল বা বিস্তীর্ণ জলাশয় ঘিরে মাছ ধরার পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অংশ নেন হাজারো মানুষ। হাজারো মানুষের ঢল নামে নামতো হাওরের বুকে। কারো হাতে পলো, কারো হাতে জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ। দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে আনন্দ-ফুর্তি করতে করতে মাছ ধরার উৎসবে নামতেন নানা বয়সী মানুষ। উৎসবে কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও অংশ নিতেন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া মাছ উৎসব এখন পুকুরে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি ) বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটি এলাকায় বিশাল এক পুকুরে আয়োজন করা হয়, পলো বাওয়া উৎসব। শেষ হয় দুপুর ১টা থেকে দেড়টার দিকে। আশপাশের গ্রামের কয়েকশ’ শৌখিন মাছ শিকারি অংশগ্রহণ করেছিলেন এ জলজ উৎসবে।
দল বেঁধে লোকজন পুকুরের মধ্যে পলো হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরু হয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। এ উৎসবের মধ্য দিয়েই স্থানীয়রা জানান দিল পুরোনো সংস্কৃতির থেকে মনের আনন্দে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেন কাপাসিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ।
এ উৎসবে যোগ দিতে ছেলে-বুড়োসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ছুটে আসেন আব্দুল কাশেমের লিজ নেয়া পুকুরে। দল বেঁধে কয়েক গ্রামের কিশোর, যুবকসহ বৃদ্ধরাও অংশগ্রহণ করেন এ পলো উৎসবে।
ভাংনাহাটি এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আহমেদ বলেন, শ্রীপুর উপজেলার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা, আমাদের নদী নালা খাল বিল বিলপ্তির পথে, হারিয়ে যাওয়া এই পুরনো ঐতিহ্য দরে রাখতে পুকুরে আয়োজন করা হয়। আমাদের নতুন প্রজন্ম দেখুক আমাদের সংস্কৃতির এ বিশেষ দিকটি।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে উন্মুক্ত জলাশয়ে কারেন্ট জাল বা চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশীয় মাছের বংশানুক্রম ধ্বংস করতে পারতো না। কিন্তু প্রশাসন আন্তরিকতা না বাড়ালে একসময় দেশীয় মাছ চায়না জাল, কারেন্ট জালের বুকে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে গ্রামীণ ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ শিকারের মতো নানা উৎসবও।