‘যে মানুষটাকে স্বপ্ন দেখি তাকে এখনও খুঁজে পাইনি’

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

97690_Popy

 

 

 

 

 

 

 

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা পপি। দীর্ঘ সময়জুড়ে এ অঙ্গনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। বেশ কিছু হিট ছবির নায়িকা তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন একাধিকবার। চলচ্চিত্রে আগের চেয়ে কাজ কমিয়ে করলেও দর্শক মহলে বরাবরই তাকে নিয়ে বিশেষ একটি আগ্রহ রয়েছে। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আজকের ‘আলাপন’-এ কথা বলেছেন পপি। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মারুফ কিবরিয়া
কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভাল আছি। আর সব ভালভাবেই যাচ্ছে সবার দোয়ায়।
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত?
এ মুহুর্তে ‘সোনাবন্ধু’ ছবিটির কাজ চলছে। জাহাঙ্গীর আলম সুমন এটি পরিচালনা করছেন। ছবিটিতে আমার বিপরীতে রয়েছেন ডিএ তায়েব। অনেক দারুণ একটি গল্প। আশা করছি সবার ভাল লাগবে।
কিছুদিন আগে ‘দ্য আমেরিকান ড্রিম’ নামের একটি ছবিতে কাজ করবেন বলে শোনা গেছে…
ছবিটিতে কাজ করছি এটা কনফার্ম। আগামী জানুয়ারির শেষ দিকে কাজটি শুরু হবে।
ছবির গল্পটা কেমন?
এটি ভিন্ন ধাঁচের একটি গল্প। সাধারণত এ ধরণের গল্প এর আগে দেখা যায়নি। আমাদের দেশের অনেকের স্বপ্ন থাকে আমেরিকায় যাওয়ার। আর এ নিয়েই গড়ে উঠেছে ছবির গল্প। আমার চরিত্রের নাম বাঁধন। অনেক মিস্টরি রয়েছে। আশা করছি সবার ভাল লাগবে। বিশেষত আমি বলতে চাই ছবিটি দর্শকের জন্য একটি চমক। ছবির গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা করছেন এম জসীম।
চলচ্চিত্রে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। নিয়মিত নন কেন?
আমি আসলে ঘোষণা দিয়ে কখনো বিরতি নিইনি। কিন্তু ইদানীং পত্রিকাগুলোতে চোখ দিলেই দেখা যায় আমার বিরতির খবর। একটা ব্যাপার বুঝি না আমি, ঘোষণা আগেই কেন ‘বিরতি’ শব্দটা উল্লেখ করা হবে। এটা একজন শিল্পীর জন্য অসন্মানজনক। বাইরের দেশের চলচ্চিত্রের দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, শীর্ষস্থানীয় শিল্পীরা দুইবছর কিংবা চারবছর পর পর ছবিতে কাজ করছেন। আমির খানের কথাই ধরুন। বছরে কিংবা দুই বছরে একটি ছবি তার মুক্তি পাচ্ছে। তার মানে কি তিনি বলিউডকে বিদায় জানিয়েছেন? আমি কখনোই বলিনি ফিল্ম ছেড়ে দিচ্ছি। কিংবা বিরতিতে যাচ্ছি। তাহলে নিউজ লেখার সময় এ ধরনের শব্দ ব্যবহার কেন করা হবে? আর নিয়মিত বা অনিয়মিত বলে কথা নয়। একটা সময় দেশে বছরজুড়ে ছবি মুক্তি পেতো এক থেকে দেড়শ’। সেটা এখন কমে এসেছে। বছরে ১৫-১৬টা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। অনেক ছবি নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু হলে মুক্তি পাচ্ছে খুব কম। অনেক সময় কিছু মুক্তি পাচ্ছেও না। আর আমরা যারা প্রোপার আর্টিস্ট, বিগত দিনে কাজ করে এসেছি তাদের নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। আজ আমার যে অবস্থান, তার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। যতটুকু সুনাম কুড়িয়েছি সেটা আমার ভাল কাজের জন্য। এই সুনাম কিংবা খ্যাতি যা-ই বলুন, আমার ধরে রাখা দায়িত্ব। তাই ভাল গল্প, নির্মাতা ছাড়া ছবি করে নিজের ক্যারিয়ারে ক্ষতি করার কোন কারণ থাকতে পারে না।
বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
একসময় মূলধারার ছবির বাজেট থাকতো এক থেকে দেড় কোটি টাকা। এখন সে ছবির বাজেট চলে আসছে ৫০ লাখেরও নিচে। দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে ২০ লাখের মধ্যেই ছবি নির্মাণ হয়ে যাচ্ছে। তার মানে ছবির মান আগের মতো নেই। বাজেট তিন ভাগের দুই ভাগই নেই। যেখানে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে সবকিছুর মান বেড়েছে। সেখানে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের মান এত কমে যায় কিভাবে? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন খারাপের দিকে চলে গেছে। বাজেট যখন কম হয় আর্টিস্ট, ডিরেক্টর এমনকি সবকিছু সস্তা মানের হয়ে যায়। বলতে গেলে চলচ্চিত্রে এখন সবচেয়ে নি¤œমানের মানুষ ঢুকে গেছে। এমনকি সিনেমা হলগুলো মান সম্পন্ন না।
আপনি কি মানের কারণেই কাজ কমিয়ে দিয়েছেন?
দেখুন প্রতিদিনই ছবির অফার আসছে। কিন্তু ভাল ছবি আসছে না একটিও। আমার পছন্দ করার মতো জায়গাটা তৈরি হয় না। আমার বছরে একটি দুটি কাজ করলেই হবে। সেটা অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। আমার ক্যারিয়ারে এত তাড়াহুড়ো নেই। কয়েক বছর কাজ করেই ইন্ডিাস্ট্র থেকে চলে যাওয়ার কোন প্ল্যান নেই। আমি মৃত্যুর পরও অভিনেত্রী পপি। তাই যতদিন বাঁচবো ভাল কিছু কাজ করে যাবো। কারণ আজ আমি পপি হয়েছি দর্শকের ভালবাসার কারণে।
চলচ্চিত্রের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
ডিজিটাল মানে কিন্তু একটা সস্তা ক্যামেরা দিয়ে শুট করা না। ক্যামেরায় শুট করার পর সেটাকে থার্টি ফাইভে কনভার্ট করে নিতে হয়। যারা শিক্ষিত নির্মাতা কিংবা চলচ্চিত্র সম্পর্কে ভাল জানেন তারা বোঝেন ডিজিটাল মানে কি। আসলে এখন অনেকে ডিজিটালের নাম করে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের সংজ্ঞাটাই পাল্টে  দেয়া হচ্ছে।
অনেকে টেলিছবিকে চলচ্চিত্র বলে আখ্যা দিয়ে হলে মুক্তি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন?
আসলে দর্শকরাও বিষয়টি নিয়ে খুব বিরক্ত। এটা আমিও খেয়াল করেছি। তবে এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেয়া উচিৎ বলেই আমি মনে করি। দেখুন, আমাদের দর্শকরা কিন্তু অনেক লক্ষ্মী।  চলচ্চিত্রের এ  বেহাল থাকা সত্ত্বেও হলে যাচ্ছেন তারা। খুব বেশি  না হলেও নতুন কোন ছবি মুক্তি পেলে সেটা দেখার আগ্রহ নিয়ে একবারের জন্য হলে গিয়ে ঢুঁ মারছেন। সেক্ষেত্রে টেলিছবি বানিয়ে ছবি বলে হলে মুক্তি দেয়াটা দুঃখজনকই বটে।
চিত্রনায়িকা পপিকে দর্শক দেখেছেন। নির্মাতা পপিকে দেখা কি যাবে কখনো?
নির্মাণ নিয়ে আসলে আমার খুব বেশি আগ্রহ নেই। কখনো ভাবিনি এ বিষয়ে। অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে চাই। তবে কখনো সুযোগ হলে প্রযোজনায় আসবো। আর সেটা অবশ্যই ভালভাবে করবো বলে ভাবছি।
বিয়ে করছেন কবে?
বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবিনি। এ মুুহুর্তে আসলে ভাবনায় নেইও। আর আমি মূলত কিছু ভাল কাজ করতে চাই। আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করতে চাই। আসলে বিয়ে করলেই তো একটা বড় দায়িত্ব মাথায় চলে আসে। তখন দেখা যায়, ছবির কাজে মন বসানোটা কঠিন হয়ে পড়ে। আর তাই ক্যারিয়ারের স্বার্থে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে চাই। আরেকটা ব্যাপার মনের মতো কাউকে পেতেও তো হবে।
এখন পর্যন্ত স্বপ্নের মানুষটিকে খুঁজে পাননি?
সেভাবে আসলে কখনো মনে করিনি। তবে এটা ঠিক, আমি যে মানুষটাকে স্বপ্ন দেখি তাকে এখনও খুঁজে পাইনি। এমন কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চাই যাকে নিয়ে বাকি জীবনটা যেন ভালভাবে কাটাতে পারি। অনেকে বিয়ে একটার পর একটা করতে থাকেন। এটা আমি একজন মুসলিম নারী হিসেবে মেনে নিতে পারি না। ঠিক মেনে নেয়া না। বিয়ে তো একবারই করবো। তাই ঠিক করেছি যাকে করবো সে যেন খুব ভাল মানুষ হয়। সবাই আমার জন্য  দোয়া করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *