সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ এই তিন জেলায় বজ্রপাতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ছয়, সিরাজগঞ্জে দুই ও সুনামগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশজুড়ে বজ্রবৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট : সিলেটে একদিনে বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিভিন্ন সময় কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে এসব ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কানাইঘাটে দুইজন, জৈন্তাপুরে দুইজন এবং কোম্পানীগঞ্জে একজন ও গোয়াইনঘাটে একজন মারা যান।
কানাইঘাটে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের কেউটিহাওর গ্রামের জমশেদ আলীর ছেলে কালা মিয়া (৩৫) এবং কানাইঘাট পৌরসভার উত্তর দলইরমাটি গ্রামের তুতা মিয়ার ছেলে নূর উদ্দিন (৫৮)।
কেউটিহাওর গ্রামের কালা মিয়া (৩৫) শনিবার দুপুর ২টার দিকে বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে আক্রান্ত হন। আর বিকেল ৩টার দিকে উত্তর দলইরমাটি গ্রামের নূর উদ্দিন (৫৮) বাড়ির পাশে মাঠে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার হন।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা নাসরীন বলেন, বজ্রপাতে পৃথক স্থানে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জেনেছি। আমরা তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে, দুপুরে জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আগফৌদ গ্রামের নূরুল হকের ছেলে নাহিদ আহমদ (১৩) এবং একই ইউনিয়নের ভিত্রিখেল ববরবন্দ গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান মনই (৪৫) বজ্রপাতে মারা যান।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রস্তুত করা হয়েছে।
ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বজ্রবৃষ্টি চলাকালে সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার অনুরোধ জানান।
এছাড়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পুটামারা গ্রামে বজ্রপাতে নেজামুল হক (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুপুর ২টায় উপজেলার ইছাকলস ইউনিয়নের পুটামারা (পশ্চিম পাড়া) গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের আরফান আলীর ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নেজামুল হক আবহাওয়ার অবস্থা খারাপ দেখে বাড়ির পাশের হালছাবড়া হাওর থেকে হাঁস বাড়িতে নিয়ে আসার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ও ইউনিয়ন বিট অফিসার মনজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নেজামুলের মরদেহ এমএজি ওসমানী হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অন্যদিকে, গোয়াইনঘাটে বজ্রপাতে মারা যান রোকশানা বেগম (৪৭) নামের এক গৃহবধু। তিনি জাফলং ইউনিয়নের ভিত্রিখেল হাওর গ্রামের আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে দুই দিনমজুরের মৃত্যু হয়। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নাগরৌহা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-উপজেলার নাগরৌহা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে রুহুল ইসলাম (২৮) ও বেলাল হোসেনের ছেলে আশরাফ (৪০)।
নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সারাদিন উল্লাপাড়ায় দিনমজুরের কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। ঝড়-বৃষ্টির সময় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাতেই তাদের ওপরে বজ্রপাত হয়। এতে রাস্তাতেই দুজন আহত হন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে দুই দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাদের তাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। মৃত দুই দিনমজুরের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে বাড়ির পাশের হাওরে লাকড়ি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই দীন ইসলাম নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মো. কাওছার আলম জানান, বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।