আল্লাহ ওগর বিচার করে না ক্যান?

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

‘আমার পুলাডা হোন্ডা কিনার জন্য আমার কাছে কতই না আবদার করছে। আমি এক্সিডেন্টর ডরে ওরে কিনে দেইনি। আমি ওরে আমার সাথে ঢাকায় নিয়ে গার্মেন্টসে চাকরিতে দেই। পুলা আর আমি এক লগে ঢাকায় থাকতাম, গ্রামের একলা থাকলে খারাপ হইয়া যাবো ভাইবা আমি ওরে আমার লগে ঢাকায় নিয়ে যাই। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতো না, ওরা আমার বাপধন ডারে মাথায় গুলি কইরা মাইরা ফেলছে। আল্লাহ ওগর বিচার করে না ক্যান? বাঁচবার লাইগা আমার বাপধন কতই না আকুতি করছে।’

আমজাদ হোসেন (৪৮) পাশাপাশি দুটি ছবি হাতে নিয়ে এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে তার গুলিতে নিহত ছেলে আসিফুর রহমানের (১৭) কথা বলেছিলেন।

ছবি দুটির একটিতে পাঞ্জাবী ও সাদা পায়জামা পড়ে ঘন কালো চুলে নৌকায় বসে আছে আসিফ। আর অন্যটিতে আসিফের নিথর দেহে মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন।

গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আসিফের। আসিফের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কেরেঙ্গাপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন ছেলে ।

পরিবারের ছয় ভাই-বোনের মাঝে আসিফ দ্বিতীয়। আসিফের বড় বোনের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। অন্য ভাই-বোনদের নিয়ে আসিফের মা গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। আসিফের বাবা প্রায় ২০ বছর যাবৎ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় জুটের ব্যবসা করছেন। ছোটবেলা থেকেই শান্ত-শিষ্ট আসিফ বছর খানেক যাবৎ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ শুরু করে। আগামী মাস থেকে বাবার জুটের ব্যবসায় সাহায্য করার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিরপুর এলাকায় সংঘর্ষে আসিফ গুলিবিদ্ধ হলে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

পরে ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কেরেঙ্গাপাড়া সামাজিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা আমজাদ হোসেন ও মা ফজিলা খাতুন। আসিফের কথা বলতে গিয়ে কাঁদছেন স্বজনেরাও।

আসিফের বাবা আমজাদ হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘অইদিন (১৯ জুলাই) জুমার নামাজ পইড়া একসাথে দুপুরের খাবার খাইয়া বাপ-পুলা ঘুমাইতে যাই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমার পুলাডা কইলো একটু বন্ধুর সাথে দেখা কইরা আসি। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টায় ছেলে ফোন কইরা বলে -আব্বু তুমি তাড়াতাড়ি আসো, আমি অ্যাক্সিডেন্ট করছি। খবর পাইয়াই আমি দৌড়াইয়া যখন যাচ্ছিলাম তখনও গুলি চলতাছে। কিন্তু গিয়া তো দেখি আমার পুলার মাথার ডান পাশে গুলির চিহ্ন লইয়া মিরপুরের আলোক হাসপাতালে পইড়া আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অইখান (আলোক হাসপাতাল) থাইক্কা রিক্সায় কইরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়া যাই। সেখানে মাথায় ব্যান্ডেজ কইরা আমার বাপধনরে নিউরো সাইন্স হাসপাতালে নিতে বলে। রিক্সায় কইরা যখন নিউরো সাইন্সে যাই তখন বাপে ব্যাথায় কাতরাইয়া কইতাছিল-আমার উপর থাইক্কা দাবি ছাইড়া দিও আব্বা। আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করবার পাইলাম না। আমি আর বাঁচমু না। পরে নিউরো সাইন্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আসিফের চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, নিউরো সাইন্স হাসপাতাল থেকে তিন হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে লাশ মিরপুরে আনা হয়। পরে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে রাত সাড়ে ৩টায় আসিফের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় এসে পৌঁছাই। আসিফ খুব শান্ত স্বভাবের ছিল।

আসিফের মা ফজিলা খাতুন বিলাপ করে বলেন, আসিফের শখ ছিল বাইক কিনব। অ্যাক্সিডেন্টের ভয়ে আমরা কিন্না দেই নাই। কিন্তু আমার বাপধন তো গুলি খাইয়া মরলো। আমার কলিজার টুকরা তো কোন দল করতো না, কোন আন্দোলনেও যায় নাই। তাও গুলি কইরা যারা আমার বাপেরে মারছে, আল্লাগ তাগো বিচার কইরো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা ব‌লেন, প‌রি‌বেশ স্বাভা‌বিক হ‌লে ওই প‌রিবারের খোঁজ নেওয়া হ‌বে। প‌রিবারটার সহ‌যো‌গিতা আমরা তা‌দের পা‌শে থাক‌ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *