২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। কিন্তু গেল সপ্তাহে ছাত্রলীগের নেতারা বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম করেছে- এমন অভিযোগ এনে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
তবে এই আন্দোলনের ফল শেষ পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে যাচ্ছে না। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৌঁছালে সেখান থেকে নির্দেশ আসে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে। বুয়েট প্রশাসন যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল সেটি স্থগিত ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা থাকছে না।
এ সিদ্ধান্ত আসার পর নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাজনৈতিক গতিশীলতা আনতে বুয়েটে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে যেভাবে ছাত্র রাজনীতি পরিচালনার কথা বলা হয়েছে, সেভাবেই আমরা কাজ শুরু করব। খুব শিগগিরই এখানে (বুয়েটে) কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, বুয়েটে গঠনতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালু হওয়ার আবারও একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।
একটি প্রতিষ্ঠানের সবাই রাজনীতি করবে বিষয়টি এমন নয়। কারও ভালো লাগলে সে করবে, আবার ভালো না লাগলে রাজনীতির সাথে যুক্ত হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান
রোববার নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েট শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
অবশ্য বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসুক— এমনটি অনেক শিক্ষার্থীই চাইছেন না। এ বিষয়ে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের বক্তব্য— একটি প্রতিষ্ঠানের সবাই ছাত্র রাজনীতি করবে বিষয়টি এমন নয়। কারও ভালো লাগলে সে রাজনীতি করবে, ভালো না লাগলে যুক্ত হবে না, এটাই স্বাভাবিক। এটা তো যার যার অধিকার। আমরা শিক্ষার্থীদের এই অধিকার নিয়েই এতদিন কথা বললাম। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকারকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ নেই। একজন মানুষও যদি তার অধিকার বাস্তবায়নের সুযোগ চায় সেটি দিতে হবে।
ফিরবে ‘অন্ধকার দিন’
সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাইছেন না বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসুক। বরং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফেরার বিষয়টিকে তারা ‘অন্ধাকার দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। একইসাথে বর্তমান সময়কে ‘সংকটময় মুহূর্ত’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা চাই এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যে ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়; যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ ব্যাচের আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসন। গতকাল ওই বিজ্ঞপ্তিতেই স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে বুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আর কোনো বাধা থাকল না।
আবরার ফাহাদের মৃ্ত্যুর পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়
তারা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের ভিসি স্যারকে এই আর্জি