সুযোগে সব সংস্থা চাঁদাবাজি করছে, অভিযোগ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগে সব সংস্থা চাঁদাবাজি করছে। এছাড়া ঘুষ দিয়ে রেস্তোরাঁ লাইসেন্স নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

সোমবার (১৮ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনের নেতারা।

এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব ইমরান হাসান। বক্তব্য দেন নবাবী ভোজের মালিক বিপু চৌধুরী। সংগঠনের সভাপতি ওসমান গনিসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ইমরান হাসান বলেন, রমজানের মধ্যেও শ্রমিক-কর্মচারীদের গ্রেফতার ও রেস্তোরাঁয় অভিযান বন্ধ হয়নি। নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণার প্রেক্ষিতে রেস্তোরাঁয় গ্রাহক আসা কমে গেছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজারের অধিক। এই সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন ৩০ লাখ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ এই সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। এই সেক্টরের বিনিয়োগ ২ লাখ কোটি টাকা। রাতারাতি এই সেক্টর গড়ে উঠেনি। নানা ধরনের লাইসেন্স/অনুমতি নিয়ে এবং সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে এই সেক্টর গড়ে উঠেছে। সরকারি পদ্ধতির জটিলতার কারণে লাইসেন্স নেয়া সময়সাপেক্ষ ও জটিল বিষয়।

ইমরান হাসান বলেন, রেস্তোরাঁ শিল্পটি মনিটরিং করে প্রায় ১২টি সংস্থা। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল দেশের সকল রেস্টুরেন্ট সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করা। লাইসেন্স সহজীকরণ বলতে বুঝাচ্ছি যে, লাইসেন্স করতে হলে এমন কিছু ডকুমেন্ট চাওয়া হয় যা বাস্তবসম্মত নয় বা প্রদান করাও সম্ভব নয়। লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়া জটিল করে অসাধু উপায়ে ম্যানেজ করার জন্য বাধ্য করা হয়।

তিনি বলেন, ভবন মালিক, রেস্তোরাঁ মালিক, সরকারি সংস্থাগুলো একসাথে কাজ করতে পারলেই এই সেক্টরটি সঠিকভাবে সুনির্দিষ্ট কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব। বর্তমানে এই শিল্পটি চরম অবহেলিত সেক্টর।

‘সময় এসেছে রেস্তোরাঁসমূহে হয়রানি বন্ধ করে বন্ধকৃত রেস্তোরাঁগুলো এখনই খুলে দেয়া। কেননা রেস্তোরাঁ শিল্পে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের আগে চলমান মাসের বেতন-ভাতাদি ও বোনাস প্রদান করতে হবে। রেস্তোরাঁ যদি বন্ধ থাকে তাহলে রেস্তোরাঁর মালিক কিভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বেতন ভাতাদি ও বোনাস প্রদান করবে? আইনি নোটিশ, গ্রেফতার ও প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাধ্যমে রেস্তোরাঁ সেক্টরে যে অবিচার বা জুলুম চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণের কোনো নির্দেশনা না দিয়ে গ্রেফতার ও রেস্তোরাঁ বন্ধের মাধ্যমে কোনো সুফল বয়ে আসবে না। ফায়ার সেফটি ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে এসওপি প্রদান করা যেতে পারে,’ বলেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসী কায়দায় রেস্তোরাঁ ভাংচুর ও সিলগালা করা হচ্ছে। অথচ সরকারি যেসব সংস্থা অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

রেস্তোরাঁ বন্ধ কোনো সমাধান নয় জানিয়ে ইমরান হাসান বলেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। দেশের রেস্টুরেন্ট খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে রক্ষা করুন। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করতে পরামর্শ দিন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। রমজান মাসে সিলগালা নাটক বন্ধ করুন। সরকারী সকল সংস্থার নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য ব্যাবসায়ীরা দায়ী নয়।

অভিযান বন্ধ না হলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করার কথা জানিয়ে সংগঠনের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আগামী বুধবার মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর সমীপে স্মারকলিপি দেবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতীকী হিসেবে এক দিনের জন্য সারা বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ বন্ধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সকল রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হবে।

বিপু চৌধুরী বলেন, ‘আমার রেস্তোরাঁর জন্য ১২টি সংস্থার লাইসেন্স থাকার পরও সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এর কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কি এমন বাংলাদেশের জন্য?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *