ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ পূর্নগঠিত হচ্ছে ঝালকাঠি বিএনপি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পূর্নগঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি কেন্দ্র থেকে ঝালকাঠিতে পাঠানো হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর গতকাল চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। চিঠিতে কড়া নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে যারা নিস্ক্রীয় ছিলেন, তারা কমিটিতে কোন পদ পাবেননা। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্র থেকেই জেলা কমিটি ঘোষনা করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে চিঠির বিষয়টি জানাজানি হবার পরে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ওমরকে নিয়ে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। চিঠির নির্দেশনা মেনে কমিটি হলে সেখানে নি: সন্দেহে বাদ যাবেন শাহজাহান ওমর। কারন তিনি গত কয়েক মাসের অবরোধ হরতালে ঝালকাঠিতে আসেননি। তার নামে কোন মামলাও হয়নি। গোটা আন্দোলনেই তিনি ছিলেন নিস্ক্রীয়। কমিটিতে না থাকার বিষয়টি অবশ্য শাহজাহান ওমর নিজেও স্পষ্ট করেছেন। গত ৬ আগষ্ট ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় শাহজাহান ওমর বলেছেন নতুন কমিটিতে তিনি আর থাকবেননা। নতুন কাউকে জেলা সভাপতি করতে তিনি কর্মীদের প্রতি এ সভায় আহবান জানান। শাহজাহান ওমর বাদ পড়লে জেলা শীর্ষ নেতৃত্বে কে আসবেন তা নিয়ে এখন জেলার তৃনমূলে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির উপদেষ্ঠা মাহবুবুল হক নান্নু এবং সাধারন সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুরের নামই বেশী আলোচনা হচ্ছে। হরতাল অবরোধকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নান্নুর নাম ৯টি মামলা হয়েছে। দুইবার তিনি কারাবরন করে সম্প্রতি জেলা থেকে মুক্ত হয়েছেন। জেলায় আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দেয়ায় নুপুরের নামে মামলা হয়েছে ১১টি। এর মধ্যে ৯টি মামলায় চার্জশিট হয়েছে। নুপুরের ছেলের নামেও হয়েছে ২টি মামলা। জেলা কমিটির শীর্ষপদ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ন পদে ব্যারিষ্টার ফখরুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে। ফখরুল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা রফিক হাওলাদারের বিরুদ্ধেও ঢাকায় ১৭টি মামলা হয়েছে। জেলা বিএনপির সহসভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া আন্দোলন সংগ্রামে নিস্ক্রীয় থাকলেও নাটকীয়ভাবে নলছিটিতে তার নামে একটি মামলা হয়। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান বাপ্পীর বিরুদ্ধে ঝালকাঠিতে একাধিক মামলা হয়। তিনি সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদিকে জেলা বিএনপির যেসব শীর্ষ নেতা আন্দোলনে নিস্ক্রীয় ছিলেন এবং যাদের নামে কোন মামলা হয়নি তাদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য জেবা আহমেদ খান এবং সাবেক এমপি ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্ট্রো অন্যতম। মনোনয়ন দৌড়ে সব সময় সক্রিয় থাকা এই দুই নেত্রী আন্দোলন সংগ্রামে কখনও ঝালকাঠি আসেননি এবং নেতাকর্মীদের কোন খোজও রাখেননি।
জানা গেছে নতুন কমিটিতে পদ বন্টনের ক্ষেত্রে নেতাদের এসব ভূমীকা কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হবে। গত কমিটিতে ছিলেননা, কিন্তু আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের সহায়তা করেছেন এমন নেতাদের নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ন পদ দেয়া হতে পারে। এমন নেতাদের মধ্যে ঝালকাঠি-১ আসনের মনোনায়ন প্রত্যাশি ও যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপির নির্বাহি কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম সহ আরো কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
জেলা কমিটির পূর্নগঠন প্রক্রিয়ায় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, বর্তমানে যে কমিটি আছে তাতেই আমার সভাপতি হবার কথা ছিলো। সম্মেলনের আগে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারের বাসায় বসে জেলা বিএনপির বৈঠকে আমাকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত হয়। শাহজাহান ওমরও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সম্মেলনে বসে শাহজাহান ওমর নিজেই সভাপতি হবার সিদ্ধান্ত নেন। নান্নু বলেন, কারাবরন এবং আমার উপর নির্যাতনের বিষয়টি দল মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, যে কমিটিই হোক তাতে আমাকে মাইনাসের কোন সুযোগ নেই। জেলার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একমাত্র আমিই ঝালকাঠিতে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি ও মামলার আসামী হয়েছি। পূর্নগঠিত কমিটির শীর্ষপদ গুলো রাজনৈতিকদের মধ্যে বন্টন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া ক্ষোভ প্রকাশ করে নুপুর বলেন, কিছূ ব্যবসায়ী মনোনয়ন প্রত্যাশিরা জেলার বড় বড় পদ দাবী করলেও আন্দোলন সংগ্রামে এদের কোন ভূমীকা ছিলোনা। এদেরকে নুপুর মৌসুমী পাখি আখ্যা দেন।