কুষ্টিয়ায় দুই দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


কুষ্টিয়ার বাজারে গত দুদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ টাকা। কুষ্টিয়া শহরের বাজারগুলোতে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। যা গত বৃহস্পতিবার ছিল ৯০ টাকা। ফলে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অকারণে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে বাজারের প্রতি নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভোক্তারা। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়া পৌর কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

লিংকন নামে এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুষ্টিয়ার বাজারে হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার ৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। দুই দিনের ব্যবধানে আজ ১২৫ টাকা কেজি দরে কিনলাম। ব্যবসায়ীরা অকারণে মন মতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজার মনিটরিং না করার কারণে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারে খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার আড়তদারের কাছে থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কিনেছি ৮৫ টাকায় আর বিক্রি করেছি ৯০ টাকায়। শুক্রবার পাইকারি কিনেছি ১০৫ টাকায় আর বিক্রি করেছি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আজকে কিনেছি ১১৫ টাকায় আর বিক্রি করছি ১২০ টাকায়। তবে আজকে কেউ কেউ ১২০ টাকাতেও পাইকারি কিনেছে, তারা ১২৫ টাকায় বিক্রি করছে। আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা খুচরা ব্যবসায়ী, বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি। কম দামে বিক্রি করলে কম দামে বিক্রি করি।

আলী ভান্ডার পেঁয়াজের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী তফেজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দাম বাড়ার পেছনে আমাদের কোনো হাত নেই। পেঁয়াজের আমদানি কম, চাহিদা বেশি। আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে। গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করেছি ৮৫ টাকা দরে, শুক্রবার ১১০ টাকা এবং আজ ১১০ টাকায় বিক্রি করেছি।

মূলত পাইকারি বাজারে দর বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর বাজার ও কিছু কিছু দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষের দিকে হওয়ায় বাজারে এই পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। তাই এই দাম বাড়তি আরও কয়েক দিন থাকতে পারে, এরপর হালি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে দাম কমে যাবে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই মূলত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারী বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারেও এসব দ্রব্যের দাম বেড়েছে। খুচরা ব্যাবসায়ীদের পক্ষে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।

দিনমজুর কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। যেভাবে দাম বাড়ছে, পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দেব। কারণ আমি দিনমজুর গরিব মানুষ। প্রতিদিন কাজ জোটে না। অভাবের মধ্যে আছি। এদিকে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৯০ টাকা, সেই পেঁয়াজ আজ ১২৫ টাকা। পেঁয়াজ খাওয়া বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নাই।

বেসরকারি চাকরিজীবী হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৬ জনের সংসার আমার একার আয়ে চালাতে হয়। আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি তারা বেতন বাড়ায়নি গত দুই বছর। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দফায় দফায় বাড়ে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা। গত দুইদিন আগে পেঁয়াজ কিনলাম ৯০ টাকা কেজি। আজ সেই পেঁয়াজের দাম ১৩০ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাওয়া যায় না। ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে না সংশ্লিষ্টরা। মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি, প্রশাসন নিরব। বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার পরও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হয় না।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন মণ্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *