বিশ্ব ইজতেমায় কাল আখেরী মোনাজাত

Slider সারাদেশ

লাখো মুসল্লীর অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হল প্রথম পর্বের বৃহত্তম জুমার নামাজ। কাল আখেরী মনোজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরী মোনাজাত পচিালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা জুবায়ের।
গতকাল শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩৭ মিনিটে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে জুমার জামাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১টা ৫১ মিনিটে।
জুমার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লী অংশ গ্রহন করেন। ইজতেমার মূলপ্যান্ডেল ছাপিয়ে ময়দানের চারিদিকে সকল রাস্তাঘাটে থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান জুমার নামাজে শরীক হন। জুমার নামাজে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম সহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী দপ্তর ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

এদিকে রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের বৃহত্তম জুমার জামাত।

ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখো মুসল্লি ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথসহ বিভিন্ন যানবাহন এবং অনেকে পায়ে হেঁটে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শরীক হন এই বৃহত্তম জুমার জামাতে। বিশ্বের ৪৬ দেশের প্রায় ২ হাজার বিদেশী মেহমান সহ লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে অসীম, অনন্ত ও প্রেমময় আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগি আর কোরআন হাদিসের আলোচনায় এখন বিশ্ব ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলে পবিত্র ধর্মীয় আবহ বিরাজ করছে। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশের আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে মাওলানা জুবায়ের অনুসারিদের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।

বিশ্বের ৪৭ দেশ থেকে দুই হাজার বিদেশী মেহমান
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিদেশী খিত্তার নিরাপত্তায় স্থাপিত বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিশ্বের ৪৭টি দেশ থেকে দুই হাজার বিদেশী মেহমান বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ গ্রহন করেছেন।

বিশ্ব ইজতেমায় পুলিশ সদস্য সহ সাত জনের মৃত্যু

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্য সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ইজতেমা ময়দানে চার জন, ময়দানে আসার পথে একজন পুলিশ সদস্য সহ তিনজন নিয়ে মোট সাতজন মারা গেছেন।

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মারা যাওয়া চার মুসল্লীরা হলেন, নেত্রকোনার থানার কুমারী বাজার গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আবদুস সাত্তার (৭০), একই জেলার বুড়িঝুড়ি গ্রামের স্বল্পদুগিয়া গ্রামের আব্দুস ছোবাহানের ছেলে এখলাস মিয়া(৬৮), ভোলা জেলার ভোল্লা গ্রামের নজির আহমেদের ছেলে শাহ আলম (৬০), জামালপুর জেলার তুলশীপুর এলাকার পাকুল্লা গ্রামের হযরত আলীর ছেলে মতিউর রহমান(৬০)।
ময়দানে আসার সময় মারা যাওয়া তিন জন হলেন, ব্রহ্মণবাডিয়ার জেলার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার চৌহদ্দী টোলা গ্রামের জামান মিয়া(৪০)। ও ইজতেমায় আসার পথে বাসচাপায় পুলিশ সদস্য হাসান উজ্জামান(৩০) মারা যান।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সেলের প্রধান মো: হাবিবুল্লাহ রায়হান মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেন।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানের শান্তিপূর্ণ অবস্থান

প্রথম পর্বের বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশ গ্রহন করতে সকাল থেকেই সর্বস্তরের মুসলমানরা জুমার জামাতে শামিল হওয়ার জন্য টুপি, পাঞ্জাবী পরে জায়নামাজ হাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দেশ বিদেশের মুসল্লীর সাথে একই জামাতে শরীক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বেশি সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে সকলের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাকুলতা। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই মুসল্লীদের ঢল আঁচড়ে পড়ে তুরাগের তীরে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটে জুমার জামাতে। টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আব্দুল্লাহপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদে জুমার জামাতে মুসল্লি সংখ্যা কম ছিল। ইজতেমা মাঠে জুমার জামাত সুবিশাল প্যান্ডেলের গন্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করে চার পাশে। সকাল থেকেই মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকে মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জুমার জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের সূরা সদস্য, শীর্ষ মুরুব্বি, কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের । রবিবার আখেরি মুনাজাতও তিনিই পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান
এদিকে পাঁচ স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর আ’ম (সার্বিক) বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের আলমী শূরার ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। তবে শুরুর এক দিন আগেই ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই ইজতেমার সূচনা ঘটে। ঈমান, আমল, আখলাক, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে তাবলীগী বুর্জুগ, ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেমেদীন পাকিস্থানের মাওলানা আহমদ বাটলা’র আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এ পর্ব। রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের বৃহত্তম জুমার জামাত। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখ লাখো মুসল্লি¬¬ ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথসহ বিভিন্ন যানবাহন এবং অনেকে পায়ে হেঁটে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শরীক হন এই বৃহত্তম জুমার জামাতে। বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ২ হাজার প্রতিনিধিসহ লাখো মুসল্লি¬র অংশগ্রহণে অসীম, অনন্ত ও প্রেমময় আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগি আর কোরআন হাদিসের আলোচনায় এখন বিশ্ব ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলে পবিত্র ধর্মীয় আবহাওয়া বিরাজ করছে। কাল (রোববার) দুপুরের আগে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশের আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে মাওলানা জুবায়ের অনুসারিদের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।
সকাল থেকেই সর্বস্তরের মুসলমানরা জুমার জামাতে শামিল হওয়ার জন্য টুপি, পাঞ্জাবী পরে জায়নামাজ হাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দেশ বিদেশের মুসল্লির সাথে একই জামাতে শরীক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বেশি সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে সকলের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাকুলতা। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই মুসল্লিদের ঢল আঁচড়ে পড়ে তুরাগের তীরে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটে জুমার জামাতে। টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আব্দুল্ল¬াপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদে গতকালের জুমার জামাতে মুসল্লি সংখ্যা কম ছিল। ইজতেমা মাঠে জুমার জামাত সুবিশাল প্যান্ডেলের গন্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করে চার পাশে। সকাল থেকেই মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকে মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে জুমার জামাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১টা ৫৫ মিনিটে। জুমার জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের সূরা সদস্য, শীর্ষ মুরুব্বি, কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদ। আগামী কাল (রোববার) আখেরি মুনাজাতও তিনিই পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিুল্লাহ রায়হান।
যারা বয়ান করলেন: শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্থানের মাওলানা আহমদ বাটলা’র আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ আসর মাওলান ফারুক ওরফে ভাই ফারুকের বয়ানের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় ইজতেমা। শুক্রবার সকালে বয়ান করেন পাকিস্থানের মাওলানা জিয়াউল হক। বাদ জুমা বয়ান করেন জর্ডানের মাওলানা ওমর খতিব। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা জুবায়ের। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট।
বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ: বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্যগণ ও বুজর্গ বয়ান পেশ করছেন। উর্দূতে বয়ান হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ করা হচ্ছে। বিদেশী মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষীর মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।
প্রথম দিনের বয়ান: বয়ানে বলা হয়, গরীরেব জন্য ঈদের নামাজের পর অতি উত্তম ইবাদত হলো শুক্রবারের জু’মার নামাজ। এদিনে আল্ল¬াহ্র কাছে যে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। এ নামাজ আদায় করার তৌফিক আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন। জুমা’র নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ওজু-গোসল করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার আমলনামায় নেকী লেখা শুরু হয়ে যায়। আমরা যা করবো আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যই করবো। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। জুমাপূর্ব বয়ানে বলা হয় সবার অন্তরে ফাজায়েলের এলেম ও আমল আসতে হবে। ফাজায়েলের এলেম শিখলে আমাদের অন্তর ইসলামে মশগুল থাকবে। আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন যেমন খাওয়া, পড়া ও বিভিন্ন জিনিসের জরুরত হয়, হাজত হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির ফাজায়েলে এলেমের জরুরত আছে। প্রত্যেক এই এলেম জানতে হবে শিখতে হবে। আর যখন ফাজায়েলে এলেম শিখবে, তখন তা দ্বারা আল্লাহ পাকের হুকুম এসে যাবে, এর দ্বারা রাসূল (সা.) এর তরিকা এসে যাবে।
খাস বয়ান ও খুসশি বয়ান: ইজতেমা ময়দানে আগত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে গতকাল খাস বয়ান করা হয়। এসময় উপস্থিত শিক্ষকদের বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপুর্ন বয়ান করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র উদ্দেশ্যে খুসশি বয়ান পেশ করা হয়।
তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসল্লি: ইজতেমা ময়দানে তাশকিলের কামরা তৈরি করা হয়েছে। ময়দানের খিত্তাগুলো থেকে বিভিন্ন চিল¬¬ায় নাম লেখানো ধর্মপ্রাণ মুসলি¬দের জামাতবন্দী করে অবস্থানভেদে (দেশী-বিদেশী) তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেওয়া হয়। আখেরী মোনাজাত শেষে এসব মুসলি¬রা জামাতবন্দী হয়ে তাবলীগের মুরুব্বিদের দিক-নির্দেশনায় দ্বীনের দাওয়াতি কাজে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। এসব জামাতবন্দীদের মধ্যে ৪০দিন, ৪ মাস, ৬ মাস, ১ বছর ও আজীবন চিল¬াধারী মুসলি¬রা রয়েছেন।
মাসলেহাল জামাত কামরা: ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লি¬দের নতুন যে কোন সমস্যা সমাধানকল্পে ময়দানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আশরাফ সেতুর পেছনে মাসলেহাল জামাতের কামরা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসে ওই জামাতের মুরুব্বিরা উদ্বুত সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন।
মাস্তুরাত ও সাপ্তাহিক তাফাক্কুদ্র কামরা: ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে মহিলাদের জন্য মাস্তুরাত কামরা তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে মহিলাদের জামাতবদ্ধ করে দেশ-বিদেশে দাওয়াতি কাজে পাঠানো ও সাপ্তাহিক তালিমের তাফাক্কুদ্র এর দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে।
ময়দানে স্থান সংকটে দূর্ভোগ: ময়দানে ধারণক্ষমতার বহুগুণ বেশি তাবলিগ সাথীদের উপস্থিতির কারণে খাবার, পানি, অজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন মেটাতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে আগত মুসল্লিরা। মুসল্লিদের চাপে যারা নির্ধারিত খিত্তায় স্থান পাননি তারা বাধ্য হয়ে ময়দানের বাউন্ডারিরবাহিরে চার পাশের খালি জায়গা, ফুটপাত, রাস্তার অলি-গলি, বাসা-বাড়ির বারান্দায় ইস্তেমায়ি সামানা নিয়ে বসে পড়েছেন।
হারানো ও প্রাপ্তি: ইজতেমা মাঠের পশ্চিম দিকে হারানো ও প্রাপ্তি সেন্টার খোলা হয়েছে। ময়দানে কেউ কিছু হারালে ও কিছু পাওয়া গেলে সেখান থেকে সঠিক তথ্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা: ইজতেমা ময়দান ও টঙ্গী থেকে মোবাইলেই দেশের বিভিন্নস্থানে নেটওয়ার্ক যোগাযোগ সমস্যা হচ্ছিল। মাঝে মধ্যে লাইন পেলেও মূহুর্তেই কেটে যাচ্ছিল। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো নেটওর্য়াক সুবিধা দিতে ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমার আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত মোবাইল টাওয়ার সংযোগ করেও এ সমস্যার পুরো সমাধান দিতে পারেনি।
নামাজের কাগজে সয়লাব: শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লি যারা নামাজের জায়নামাজ সাথে আনেননি তারা প্রতি পাতা নামাজের কাগজ ৫-১০ টাকা করে কিনে জায়নামাজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নামাজ শেষে ইজতেমা ময়দান ও রাস্তায় হাজার হাজার পত্রিকার পাতা ও নামাজ পড়ার কাগজ পড়ে আশপাশের রাস্তাঘাট সয়লাব হয়ে গেছে।
টঙ্গীতে বাসা বাড়ীতে উৎসবের আমেজ: বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গী এলাকাসহ আশ-পাশের আবাসিক এলাকাগুলোতে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। হালকা কনকনে শীতের বাতাসকে উপেক্ষা করে প্রতিটি বাসা বাড়িতে ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে গৃহবধূ থেকে শুরু করে বাড়ির মা,বোনদের। কে কার আগে রান্না করে মেহমানদের আপ্যায়ন করবে এনিয়ে অনেক বাড়ির ভাড়াটিয়াদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগীতা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও গ্রেপ্ততার: বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নিয়োজিত ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইজতেমাস্থল ও আশে-পাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসী খাদ্য পরিবেশন ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়ের অভিযোগে বিভিন্ন খাবারের দোকান ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাসহ জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন এলাকার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের পূর্ববতী তালিকা অনুযায়ী গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা: টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মুসল্লি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মুসল্লি ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়াজনিত কারণে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তারিক হাসান। এছাড়া ইজতেমাস্থলের পার্শ্ববর্তী ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে কয়েক হাজার মুসল্লি বিনামূল্যে ওষুধ সংগ্রহ ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ৩শ’, হামর্দদ ল্যাবরেটরিজ প্রায় ২হাজার, ইবনে সিনা ৬শ’ রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।

এদিকে গতকাল বিকেল ৩টায় ইজতেমা ময়দানে জেলা প্রশাসকের সমন্বয় কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন জুবায়ের পন্থী তিন মুরুব্বী। তারা হলেন, ইজতেমার প্রধান সম্বয়কারী প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন, মুফতি আমানুল হক, আবুল হাসনাত, ডা: আজগর আলী ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।
সম্মেলনে মুফতি আমানুল হক বলেন, আমরা জুবায়ের পন্থী না। আমরা শূরায়ে নেজাম। আমরা কোন ব্যাক্তির না আমরা শূরার লোক। মাওলানা সাদের আগমনের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য না করে তিনি বলেন, মাওলানা সাদ সাহেবের অনেক বক্তব্য আছে যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তার আগমনকে আলেম ওলামারা কি ভাবে নিবেন তা বলতে পারব না।

প্রসঙ্গত: গতকাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে এই পূর্ব শেষ হবে। ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্ব। আজ বেলা দেড়টায় প্রথম পর্বের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *