নির্বাচনে সতর্ক দৃষ্টি বিএনপির

Slider রাজনীতি


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় এ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি এ নির্বাচনকে ডামি নির্বাচন আখ্যা দিয়ে জনগণের প্রতি ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রতিবাদে চলছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, জনগণ আজকের নির্বাচন বর্জন করবে। এ নির্বাচন নিয়ে কারো আগ্রহ নেই। দেশে-বিদেশে এ নির্বাচন বৈধতা পাবে না। জানা গেছে, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। প্রয়োজনে আরো দেড় মাস আন্দোলন টেনে নেবে তারা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশবাসীকে ভোট বর্জনের আহ্বান বেশ কিছু দিন চালিয়ে আসছে বিএনপি। ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণসহ নানাভাবে প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। বিএনপি মনে করছে, এই প্রচারণায় জনগণ ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা জোরজবরদস্তি করলেও কেবল আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা ছাড়া অন্যদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারবে না। কারণ, ‘একতরফা’ ভোট নিয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ-উৎসাহ নেই। এবার কোন প্রক্রিয়ায় কী ধরনের নির্বাচন হচ্ছে- জনগণের কাছে তা একেবারেই স্পষ্ট। তাই ভোটের দিনও বিএনপির নেতাকর্মীরা যথাসম্ভব গ্রেফতার এবং সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি সরকারি চাপে দলের কেউ যাতে ভোট দিতে না যায়, সেটাও নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজ কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। ভাগাভাগির এ নির্বাচন জনগণ ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশে-বিদেশে এ নির্বাচন বৈধতা পাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। একই সাথে ভাঁওতাবাজির এ নির্বাচনের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ হরতালের কর্মসূচি চলছে।

জানা গেছে, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল সোমবারও সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়া হতে পারে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, একতরফা, ডামি, ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন বিএনপি বয়কট করেছে। দলের পক্ষ থেকে ভোটারদেরও এই নির্বাচনী তামাশা বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে মানুষকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, মিছিল, পথসভা, উঠান বৈঠক, কোথাও কোথাও মাইকিং, বক্তব্য-বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ডামি গানসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন ঘিরে সরকার কী ধরনের নীল নকশা শুরু করেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গতকাল (শুক্রবার) তা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশবাসী তা অবগত হয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, এসবের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারের নীল নকশা এবং একতরফা ভোট বর্জনের আহ্বান দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।

জানা গেছে, বিএনপি ভোট বর্জন করলেও ভোটের দিন নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটার উপস্থিতি ও ভোট ঘিরে সহিংসতার ঘটনাসহ নির্বাচনের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এ লক্ষ্যে দলটির দফতরের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, ভোটের দিন ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই মূল সহিংসতা হবে। কারণ, নৌকার পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। ভোটে জিততে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাইবে না। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বিদেশী চাপে নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলীয় ডামি প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্য ছোট দলগুলোকে দাঁড় করিয়েছে। ভোটের দিনও সেটা প্রমাণ করতে চান তারা। সে জন্য সারা দিনই ভোটকেন্দ্রে জটলা থাকবে। আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেতে নির্বাচনের পর ভোটার উপস্থিতির সংখ্যাও বড় করে দেখাবে। আওয়ামী লীগের এটা পুরনো কৌশল। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও তারা একই কৌশল অবলম্বন করেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এরই মধ্যে বলেছেন, নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট দেখাবে সরকার। তাই সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক ও প্রশাসনিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের প্রকৃত চিত্র সংগ্রহের চেষ্টা করবে বিএনপি। দলটি মনে করছে, সরকার ও সরকারি দল ব্যাপক জোরজবরদস্তি না করলে এই নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়বে।

জানা গেছে, দিনব্যাপী মনিটরিং শেষে ভোটের সার্বিক চিত্র নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হবে। এ ছাড়া তথ্য-প্রমাণসহ সংগৃহীত উপাত্ত দ্রুততম সময়ে ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্ব ও বিদেশী সংস্থার কাছে তুলে ধরবে দলটি। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, জনগণ ভোট বর্জন করলে নির্বাচন হলেও তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের ইতিহাসে ৭ জানুয়ারি আরো একটি একতরফা পাতানো নির্বাচনের সবচেয়ে অন্ধকারময় অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। অভিনব মডেলের ডামি নির্বাচনী নাটকের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় থাকতে এক বিপজ্জনক খেলার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠিতব্য এই ভোটরঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর বিপদের অতলে। ইতোমধ্যে এই তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

বিএনপির ডাকে দেশব্যাপী চলমান ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আজ রোববার ভোটের দিনও অব্যাহত থাকবে। মূলত ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে ডাকা এই হরতাল ঘিরে ভোটের দিন কোনো ধরনের সঙ্ঘাত-সংঘর্ষে না জড়াতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে চলমান হরতালের সময়সীমা আরো বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে একতরফা নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে ভোটের পরের দিনও হরতালের ডাক দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া ভোটের দিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হরতালের মেয়াদ আরো একদিন বাড়তে পারে। এর পর সমাবেশ, বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। ন্যূনতম দেড় থেকে দুই মাস কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান তারা।

এ দিকে নির্বাচনের নামে প্রহসনের প্রতিবাদে গণতন্ত্র মঞ্চ আজ রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।

জানতে চাইলে মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা দেশবাসীকে আসন্ন ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান-বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছি। ভোটারদের প্রতি আমাদের আহ্বান, নির্বাচনের দিন ভোটের সময়টাতে আপনারা বাসায় থাকবেন, ব্যক্তিগত কাজে ও পরিবারকে সময় দেবেন। একই সাথে সচেতন নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে একজন মানুষ যেমন ভোটদানে বিরত থাকবেন, তেমনি তার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অন্যরাও যাতে এই নির্বাচনী প্রহসনে অংশগ্রহণ না করে- সেই উদ্যোগ নেবেন, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করবেন। শোনা যাচ্ছে, টাকা দিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে। কেউ টাকার কাছে ভোট বিক্রি করবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *