ব্যবহারকারী বেশি হলেও ‘তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ’ বাতিল

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, মোবাইল অপারেটরগুলোর ৩ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজের ব্যবহারকারী বেশি। গত তিন মাসের তথ্য প্রকাশ করে বিটিআরসি জানায়,৬৯.২৩ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করেন। মোবাইল অপারেটররাও বলেছে— তাদের ৩ দিনের প্যাকেজের ব্যবহারকারী বেশি। তারপরও বিটিআরসি গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করে ৩ দিনের প্যাকেজ বাতিল করে দিয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ, শিক্ষার্থী, প্রত্যন্ত গ্রামের ব্যবহারকারীরা ৩ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বেশি ব্যবহার করেন।

বিটিআরসি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগেই এই তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আর এই ঘোষণার ফলে এখন থেকে সর্বনিম্ন মেয়াদের প্যাকেজ হবে ৭ দিনের। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

ডাটা (ইন্টারনেট) ও ডাটা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজের নতুন নির্দেশিকার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘৩ দিনের মেয়াদে মোবাইল অপারেটরগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থে ডাটার মেয়াদ সীমিত রাখতে চায়।’ অতিরিক্ত মুনাফা থেকে অপারেটরদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পূর্বে অসংখ্য প্যাকেজ থাকায় জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়েছে, নতুন নির্দেশনায় ৪০টি প্যাকেজ গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্য দেবে।’ বর্তমানে ৩ দিনের প্যাকেজের যে মেয়াদ, সেটাই ৭ দিনের মেয়াদ হবে বলে জানান তিনি।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ।

কমিশনের মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ নতুন প্যাকেজ নির্দেশিকা বিশদভাবে উপস্থাপন করেন।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামীতে ইন্টারনেটের প্যাকেজ সংখ্যা হবে ৪০টি, যা আগে ছিল ৮৫টি। এছাড়া সব প্যাকেজের সময়সীমা হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড। প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিডেট ডাটা প্যাকেজ অফার করবে— ২৫, ৫০ ও ৭৫ জিবি করে। এছাড়া মোবাইল অপারেটরগুলোর নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে ফ্লেক্সিবল প্ল্যান প্যাকেজ ডিজাইন করা যাবে। যা মূল প্যাকেজ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বোনাসসহ অব্যবহৃত ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড (অব্যবহৃত ডাটা নতুন প্যাকেজে যুক্ত হওয়া) হবে, যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কেনা হয়।

অ্যামটবের সভাপতি এবং বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস নতুন নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাংলালিংক গ্রাহক সন্তুষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।’

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘অপারেটরগুলো সবসময় গ্রাহকবান্ধব এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে থাকে।’

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিটিআরসি’র নতুন নির্দেশিকায় অপারেটর ও গ্রাহকদের জন্য স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হয়েছে এবং টেলিপ্ল্যানগুলোতে গ্রাহকদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।’

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, ‘রবি সব সময় গ্রাহককের গুণগত সেবা দেওয়ার পাশাপাশি উদ্ভূত প্রতিটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে।’ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে অপারেটরগুলো কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে বিটিআরসির সহায়তা কামনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, মোবাইল ডাটার ফ্লোর প্রাইস ও সিলিং প্রাইস আপাতত নির্ধারণ করা না হলেও ভবিষ্যতে সময়ের চাহিদানুযায়ী সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন

বিটিআরসি তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের ঘোষণা এবং সার্ভে প্রতিবেদন সাংঘর্ষিক বলে মনে করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিটিআরসির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ১৬০০ গ্রাহকের তথ্য অনুযায়ী। ১৩ কোটি গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ১৬০০ গ্রাহকের চাহিদা তিন দিনের ইন্টারনেট না থাকা। কিন্তু এ সব গ্রাহকের বিহেভিয়ার কী, তারা কী ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহার করে, সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। বিটিআরসি বলেছে, তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করার ফলে গ্রাহকরা প্রতারিত হয়েছেন, অপারেটরদের অনৈতিক কার্যক্রমের কারণে। আমাদের প্রশ্ন, অপারেটররা যদি অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করলো না কেন?’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিগগিরই আদালতে রিট দায়ের করবো।’

বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) চট্টগ্রাম

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, বিটিআরসির মোবাইল ডাটা প্যাকেজ সীমিতকরণ প্রান্তিক মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত করবে। বিটিআরসি মোবাইল ইন্টারনেটের প্যাকেজের ক্ষেত্রে নতুন যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তা গ্রাহকবান্ধব নয়। সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করবে এবং সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *