ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছেছে ট্রায়াল ট্রেন। প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ পাড়ি দিতে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে ট্রেনটির।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি ভাঙ্গায় পৌঁছায় দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে।
পরীক্ষামূলক যাত্রার ট্রেনটি চালিয়েছেন লোকোমাস্টার এনামুল হক এবং সহকারী লোকোমাস্টার এম এ হোসেন। আর গার্ড হিসেবে ট্রেন পরিচালনা করেছেন আনোয়ার হোসেন।
ওই ট্রেনে ছিলেন রেলমন্ত্রী মো: নূরুল ইসলাম সুজনসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা।
আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু দিয়ে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেলমন্ত্রী মো: নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এই রেল যোগাযোগ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। ঢাকা-ভাঙ্গা রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের পর যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে। এর সুফল সারাদেশের মানুষ পাবে।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
রেললাইনটি তিনটি ধাপে নির্মিত হচ্ছে (ঢাকা ও গেন্ডারিয়ার মধ্যে একটি ৩ কিলোমিটার সংযোগ নির্মিত হচ্ছে): ৩৭ কিলোমিটার গেন্ডারিয়া-মাওয়া অংশ, একটি ৪২ কিলোমিটার মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ এবং একটি ৮৭ কিলোমিটার ভাঙ্গা জংশন-যশোর অংশ। প্রায় ৪৩ দশমিক দুই কিলোমিটার লুপ, সাইডিং এবং ওয়াই-সংযোগ মোট লাইনের দৈর্ঘ্য ২১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার।
ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ছয়টি ইতোমধ্যে রয়েছে। আগের স্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একবার সম্পূর্ণ হলে ট্রেনগুলো ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হওয়ায় ঢাকা-যশোর রেললাইনের কোথাও কোনো রেল ক্রসিং থাকবে না।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেনের মতে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার। ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতুতে যুক্ত হয়েছে নতুন রেললাইন।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ধরে গেন্ডারিয়া হয়ে কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ কেনা হয়েছে। তাদের দিয়ে রেক সাজিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’ শীর্ষক পুরো প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা-যশোর রুট খুলে দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৩ মে অনুমোদিত হয়েছিল। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এরপর ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। খরচ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি জি-টু-জি (সরকারের সঙ্গে সরকার চুক্তির) ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। চীনের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি) প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২৬৬ দশমিক ৭৯ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি খরচের যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।