তোর কলিজা ছিঁড়ে ফেলব

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


রাজধানীর মিন্টো রোড। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রধান কার্যালয়ের সামনে গতকাল রবিবার বিকালে হাঁটাহাঁটি করছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। পোশাকে দারিদ্র্যতার ছাপ। আচরণে ইতস্তত ভাব। বোঝা যাচ্ছে, কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত। তার নাম লিটন কর্মকার। এসেছেন মানিকগঞ্জ থেকে। তার হাতে একটি কাগজ। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি অভিযোগপত্র। ডিএমপির এক এসআই তাকে টেলিফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের একপর্যায়ে গুষ্টিসুদ্ধ মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। ভয়ে আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে তাই তিনি ছুটে এসেছেন এ বিষয়ে ডিএমপিপ্রধানের কাছে নালিশ জানাতে; এসেছেন তার নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয় সেই আরজি নিয়েও। তার বিশ্বাস, ডিএমপিপ্রধান নিশ্চয় এর বিচার করবেন, নিশ্চিত করবেন লিটন ও তার পরিবারের নিরাপত্তাও।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ডিএমপি কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দিয়ে আসেন লিটন কর্মকার। এরপর কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, স্থানীয় একজনের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত একটা ঝামেলা আছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। সেই ঝামেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই মানিক তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেই ক্ষান্ত হননি, মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।

অভিযোগের সত্যতা মেলে লিটন কর্মকার ও এসআই মানিক শিকদারের ফোনালাপের অডিও রেকর্ডে। রেকর্ডের তথ্যানুযায়ী, এটি গত ৭ আগস্ট দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের ঘটনা। এসআই মানিক শিকদার একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে লিটন কর্মকারকে ফোন দেন। ফোনে তিনি লিটনকে বলেন, ‘ঢাকা ডিবি অফিস থেকে মানিক বলছি। শরীরে কি চর্বি বেশি হয়ে গেছে নাকি? এই শু… বাচ্চা। ছিঁড়ে ফেলব। তোর কলিজা কেটে ছিঁড়ে ফেলব। মানিকের অকথ্য গালিগালাজের অধিকাংশই ছাপার অযোগ্য। এভাবে ফোনে অশ্রাব্য গালিগালাজের একপর্যায়ে লিটন কর্মকার বলেন, ‘আমারে কী ব্যাপারে গালিগালাজ করতেছেন বলবেন তো, কী দোষ?’

অন্যপ্রান্ত থেকে এসআই মানিক বলেন, ‘টিটকারি করোস? তোরা সুমনদের সাথে ঝামেলা করোস কেন? কালকে আমি ফোনে সুন্দরমতো কথা বলছি। যে, দাদা ঝামেলা কইরেন না, আমি এসে বুঝিয়ে দিব। খুব সাহস হয়ে গেছে, চর্বি হয়ে গেছে! তোর কোন বাপ আছে? তোর কোন বাপ তোরে নাড়ায়? তোর বাপের….। এখন তুই আমারে চিনবি, তোর বাপ চিনবে।’

এক ফাঁকে লিটন বলেন, ‘ঘটনা না জেনেই আমাকে গালিগালাজ করতেছেন…’

মানিক শিকদার বলেন, ‘ঘটনা জানা না জানার কিছুই নাই। আমি ফোন দিয়েছি। তোরা টিটকারি করোস কেন? তোদের বলছিলাম চুপচাপ থাকার জন্য। তোরা টিটকারি করোস। তোদের এতবড় সাহস দেয় কারা? আমি যদি আসি তোর কয়েক ভাইবোনকে সাফ মেরে ফেলব।

হুমকিদাতা এই এসআই মানিকের বাড়ি রাজবাড়ী। তিনি ডিএমপির গুলশান বিভাগে কর্মরত। মানিকগঞ্জের শিবালয়ে একটি জমি নিয়ে লিটন কর্মকারের সঙ্গে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরোধ রয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা রয়েছে। ওই ব্যক্তি এসআই মানিকের ঘনিষ্ঠ। এসআই মানিক তার সেই ঘনিষ্ঠজনের পক্ষ নিয়ে লিটন কর্মকারকে হত্যার হুমকি দেন, করেন নোংরা গালিগালাজ।

ডিএমপি কমিশনার বরাবর দেওয়া অভিযোগে লিটন কর্মকার লিখেছেন, এসআই মানিক মোবাইল ফোনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমার গোষ্ঠীসহ শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেন। আমাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। যার অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের একটি দেওয়ানি মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে। তিনি অযাচিতভাবে সেই মামলায় হস্তক্ষেপ করছেন।

অভিযোগে লিটন কর্মকার আরও জানান, নিরাপত্তা আর ঘটনার বিচার চেয়ে গত শনিবার তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। ওসি ঘটনা শুনে তাকে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে পাঠান। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার তার কথা, গালাগালি ও হুমকির অডিও রেকর্ড শুনে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে তিনি ঘটনার বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেন।

হত্যার হুমকি ও গালিগালাজের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মানিক শিকদার আমাদের সময়কে বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। পরে বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা হয়ে গেছে।

কী নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়েছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লিটন কর্মকার আমার বন্ধুর এলাকার। ওদের গ্রাম্য একটি ঝামেলা ছিল।

হস্তক্ষেপ করা বারণ; এসআই মানিক অন্যায় করেছেন

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন- জমি, অর্থ, ফ্ল্যাট বা চলমান দেওয়ানি মামলার কোনো বিষয় নিয়ে পুলিশকে হস্তক্ষেপ না করার জন্য ডিএমপি সদর দপ্তর ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একাধিকবার সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ জুলাইও ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জমিজমা, প্লট, ফ্ল্যাট, সম্পত্তি দখল বা বেদখলের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত না হওয়ার জন্য একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এমন ধরনের ঘটনায় বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে এসআই মানিক যেভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন, তা অন্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *