অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থামাতে সমাধান চাইবে তৃণমূল

Slider রাজনীতি


আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে লাগাতার কর্মসূচিতে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলকে নির্বাচনমুখী করতে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ আগস্ট রংপুরে ‘বিশাল জনসভার’ মধ্য দিয়ে ফের বিভাগীয় পর্যায়ে পা রাখতে শুরু করেছেন তিনি। এসব সমাবেশে তিনি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তুলে ধরে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। এ ছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকসহ দলের অভ্যন্তরীণ ফোরামে নেতাকর্মীদের এলাকামুখী হতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের উন্নয়ন প্রচারের পাশাপাাশি বিরোধী পক্ষের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য বারবার নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। তবু তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিভেদ কমছে না। দলের কেন্দ্র থেকে ঘোষিত দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে আলাদা আলাদা কর্মসূচি করে যাচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। জড়াচ্ছেন দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সহিংসতায়।

এমন বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন ও জাতীয় সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা (গাইডলাইন) দিতে আজ রবিবার তৃণমূল নেতাদের অংশগ্রহণে বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছেন শেখ হাসিনা। বর্ধিত সভার রীতি অনুযায়ী প্রথমে তিনি তৃণমূলের চিত্র জানতে সারাদেশের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন। এরপর এসব বক্তব্যের মাধ্যমে আসা দলের ক্ষোভ-দ্বন্দ্ব নিরসনে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন জাতীয় নির্বাচনে করণীয় বিষয়ে।

এদিকে আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের এলাকার চিত্র বিগত সময়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন। আবার দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ দেওয়ার অভিপ্রায়ে দপ্তরে জমা দিয়েছেন। এসব অভিযোগের কোনো সুরাহা না হওয়ায় তারা সুযোগ পেলে আজকের বর্ধিত সভায় তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এত নবড় দলের অভিমান ও ক্ষোভ থাকবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তবে এটা যত কমিয়ে আনা যায়, ততই মঙ্গল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ, ভোলা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোর, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আওয়ামী লীগে নিজেদের মধ্যে ৪৭টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ৫৬৪ জন। গত ২৫ জুলাই নাটোরে মিঠুন আলী নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

১৬ জুলাই কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজের (৪২) বাম হাত কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। ২৮ জুন ভোলার লালমোহনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হওলাদারের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালান বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুন নবী চৌধুরী শাওনের অনুসারীরা।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে মনোনয়নপ্রত্যাশী শেহেরীন সেলিমের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম ও তার বোন বর্তমান সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান কবিতার মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্ব রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর আওয়ামী লীগেও।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুর-মাদারীপুরের রাজনীতিতেও দলীয় কোন্দল চরমে। এই কোন্দলের কারণে সেখানে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার সক্ষমতা স্থানীয় আওয়ামী লীগ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করেন অনেকে। সেখানকার নেতারাও অভিযোগের স্তূপ নিয়ে সভায় আসবেন বলে জানা গেছে।

বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনার সামনে কথা বলার সুযোগ পেলে কী বলবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা পর্যায়ের এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্যরা নানা ধরনের বিতর্কিত কাজে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়। এমন বাস্তবতায় নতুন কেউ মনোনয়নপ্রত্যাশী হলে তাদের শারীরিকভাবে প্রহার পর্যন্ত করা হয়। সুযোগ পেলে এসব প্রভাবশালী নেতা ও এমপির চিত্র-চরিত্র তুলে ধরব।’

বিশেষ বর্ধিত সভার গুরুত্ব ও তৃণমূলের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতীয় সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে যে দিকনির্দেশনা দেবেন, আমরা তা সাদরে গ্রহণ করব। আর যদি কথা বলার সুযোগ পাই তা হলে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনের দিকে যাত্রা করার অনুরোধ করব।’

এ বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘বর্ধিত সভায় তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া এবং বিরোধী পক্ষের আন্দোলন মোকাবিলার বিশেষ গাইডলাইন দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’

বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলোর লাগাতার আন্দোলন মোকাবিলা ও জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রস্তুতি যখন সামনে আসছে তখন এসব দ্বন্দ্ব দলকে কী বার্তা দিচ্ছে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের। এ দলে প্রতিযোগিতা আছে, দ্বন্দ্ব আছে এবং কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন অথচ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আবার প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে ভুল করেন না আমাদের নেতাকর্মীরা। আজ সভায় নেত্রীর সঙ্গে তাদের ভাব-বিনিময়ের সুযোগ হবে। এতে তারা উচ্ছ্বসিত। সভা থেকে তারা চূড়ান্ত গাইডলাইন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ মনোভাব নিয়েই বাড়ি ফিরবেন।’

এদিকে আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন।

বিশেষ বর্ধিত সভা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী, গণভবনে অনুষ্ঠেয় বিশেষ বর্ধিত সভায় আমন্ত্রিত নেতাদের বিজয় সরণি দিয়ে জাতীয় সংসদের লেক রোড হয়ে গণভবনের ১নং গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত গাড়ি ডিএমপি পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে (বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র সংলগ্ন মাঠ) পার্কিং করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *