আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না: প্রধানমন্ত্রী

Slider রাজনীতি


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি বলে, আমরা নাকি পালাবার পথ পাবো না। তাদের বলি, আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না। মুচলেকা দিয়ে পালিয়েছিলো তারেক জিয়া। আর তখন আমি বিদেশ থেকে জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে কৃষকলীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘তোরা তো পালিয়েই আছিস! পলাতক আসামির তত্ত্বাবধায়নে এতো বড় কথা আসে কিভাবে?’

এসময় বিএনপির আন্দোলনের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের জন্য কোথা থেকে এতো টাকা পাচ্ছে? এসব পাচারের টাকা।’

আওয়ামী লীগ প্রতিশোধে বিশ্বাসী না- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার একভাগ প্রতিশোধ নিলেও ওদের হদিস পাওয়া যেতো না। সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে ওরা প্রত্যাখ্যাত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালের দেশে আসার পর জিয়াউর রহমান আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি যে আমার মা-বাবা, ভাই বোনের জন্য দোয়া করব, মোনাজাত করবো সে সুযোগটাও দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমাকে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া পড়তে হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৫ আগস্টের সময় আমি এবং আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। জিয়াউর রহমান আমাদের আসতে বাধা দিয়েছে। শেখ রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, আমাদের আত্মপরিচয়ের সুযোগ এনে দিয়েছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। সে পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তারপরেই সেই ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সাল আমাদের জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায়। ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছিল আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের যে কোন মানুষ তার আপনজন খুন হলে বিচার চায়, আর আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘শুধু হত্যা নয়, ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিলো। ৭ মার্চের ভাষণ, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিলো। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিলো। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়, মন্ত্রী বানানো হয়। জিয়ার এই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এরশাদ এবং খালেদা জিয়া।’

১৫ আগস্টকে জাতির কলঙ্কময় অধ্যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিদেল কাস্ট্রো, ইন্দিরা গান্ধী, মার্শাল টিটোসহ অনেকে নেতাই বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাতে সাড়া না দিয়ে বলেছিলেন, ওরা তো আমার ছেলের মত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার বাধা এসেছে যাতে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের প্রভুরা এখনো সে চক্রান্তে লিপ্ত। কিন্তু জনগণই আমাদের মূল শক্তি। বাংলার মানুষই আমার আপনজন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে কেবল ক্ষমতায় আসা নয়, আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে বাংলার মানুষের উন্নতি করতে। আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি, মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের দায়িত্ব ও লক্ষ্য।’

বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষের যতটুকু উন্নতি হয়েছে, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে।’

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *