সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু

Slider রাজনীতি


বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও তার আগে নেতাকর্মীদের ভিড়ে, অতিরিক্ত ওজনে মঞ্চ ভেঙে পড়ে। এসময় মঞ্চে জাসাস শিল্পীরা গান পরিবেশন করছিলেন।

এরপর সেখানে একটি ট্রাক এনে মঞ্চ ঠিক করতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। এই সময়ে জাসাস শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। সাড়ে ৩টার দিকে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে তারুণ্যের সমাবেশ আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। তবে দুপুরের আগেই সমাবেশস্থল ভরে এই তারুণ্যের সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের এলাকার লোকারণ্য হয়ে যায়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থলে প্রবেশের জন্য একটি পথ। এ কারণে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, বিশেষ বক্তা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তারণ্যের সমাবেশ পরিচালনা করছেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে রাজধানীর ঢাকার এই সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। এই সমাবেশ থেকে এক দফা দাবিতে আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। রাজধানী ঢাকার এই ‘তারণ্যের সমাবেশের’ আগে এরই মধ্যে দেশের পাঁচটি বড় শহরে সমাবেশ করে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজকের শেষ সমাবেশে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ভোটাধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

ঢাকায় আজ অনুষ্ঠেয় তারুণ্যের সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের সমন্বয়ে এ সমাবেশ হবে। এটি সফলের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টন, কাকরাইলে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি।

সমাবেশে অংশ নিতে এরই মধ্যে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর নেতাকর্মী ও পেশাজীবীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশ ঘিরে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছে।

আজ ভোর থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করছে। নতুন ভোটার আর তরুণদের কাছে টানতে জুন মাসের প্রথমদিকে বিএনপি ‘তারুণ্য সমাবেশে’-এর ঘোষণা দেয়। দলটির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে এই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম। সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে পরে দিনক্ষণ ও তারিখ ঘোষণা করা হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ জুন চট্টগ্রাম, ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করেছে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের বিভিন্ন খাতে তাদের দর্শন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ‘পরিবর্তন ও দলীয়করণ’ করেছে।

তারা মনে করে, দেশের মহান স্বাধীনতা-সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে শুধু আওয়ামী লীগেরই অবদান ছিল। অথচ আরও যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, তাদের উপেক্ষা ও অবহেলিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ঘটানো হয়েছে। গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে পারেনি। রাজপথে হামলা-মামলার শিকার হয়েছে অনেকেই। এ সরকারের বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি তরুণ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাই তরুণদের মাঝে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম তৈরির লক্ষ্যেই এসব সমাবেশ হচ্ছে।

এই সমাবেশে বিএনপির নতুন কর্মসূচি আসবে বলেও জানা গেছে। দলটি ফের শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশের কথা ভাবছে বিএনপি। দলটি আরও কিছুদিন গতানুগতিক কর্মসূচি দিয়ে ধীরে চালো নীতিতে এগোতে চায়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবার বিএনপি ঢাকাকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢাকা ঘেরাও বা অবরোধ করার প্রস্ততিও রয়েছে দলটির। ঢাকার বাইরে নেতাকর্মীদেরও রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করা লাগতে পারে বলে দলটি এরই মধ্যে বার্তা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *