রপ্তানি বহুমুখীকরণ উদ্যোগে সাফল্য আসছে না

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

কাজে আসছে না রপ্তানি বহুমুখীকরণ উদ্যোগ। একক পণ্য, একক বাজার বা একক অঞ্চলনির্ভরতার কারণে দেশের পণ্য রপ্তানিতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত এবং ৭৮ শতাংশই আসছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে। এভাবে একক পণ্য ও একক বাজারের ওপর নির্ভরতার কারণে হঠাৎ কোনো কারণে রপ্তানিতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এ কারণে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে উদ্যোগ নেওয়া হলেও সাফল্য আসছে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলে আসছে, রপ্তানির প্রধান গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকার মতো বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় সেখানে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেই চ্যালেঞ্জ সামলে নিয়ে কীভাবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়, সে বিষয়ে করুণীয় নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ পার্টিসিপেশন ইন ট্রেড অ্যান্ড গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মূল্যব্যবস্থা বা শৃঙ্খলে (গ্লোবাল ভ্যালু চেইন) পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ হচ্ছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশে উচ্চ শুল্কহারের কারণে আমদানি ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। ফলে কোনো রপ্তানি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এর কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক দিতে হয়। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে বিশ^বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে পুরোপুরি বের হয়ে গেলে অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপের বাজারে বেশকিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্য করার দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি ইউরোপের বাইরে অন্যান্য অঞ্চলেও রপ্তানি বাজার বাড়াতে হবে।

সূত্র জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ডিজিটাল বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার বিষয় অনেক দিন ধরেই অনুধাবন করছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বাধা চিহ্নিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।  এসব বাধা দূর করতে এবং ডিজিটাল কমার্স সম্প্রসারণে ‘ক্রস বর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্য নীতিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ না হওয়া। এমনকি যে টেক্সটাইল পণ্যে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান, সেই পণ্যের ক্ষেত্রেও কোনো বৈচিত্র্য আনতে পারেনি দেশটি। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ গতানুগতিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খুবই দুর্বল। অধিকাংশ মধ্যবর্তী পণ্য ও কাঁচামাল অন্য দেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে এসব পণ্যের মূল্য সংযোজন খুবই কম। তাই রপ্তানি কার্যক্রম দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থের সার্কুলেশন বাড়াতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না।

প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, পণ্যের বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। এমনকি উৎপাদনের বিভিন্ন খাতের ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পণ্যের বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করতে না পারায় বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পরিমাণ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে পারছে না। এক্ষেত্রে ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, দেশটি ধীরে ধীরে কৃষি থেকে মেনুফ্যাকচারিংয়ের দিকে ধাবিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তারা পোশাক খাতে নজর দিয়েছে। এরপর তারা ইলেকট্রনিক্স খাতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বড় কোনো খাত তৈরি করতে পারেনি। বাংলাদেশে আসা এফডিআইয়ের প্রায় ২০ শতাংশই আসে বস্ত্র খাতে। বিশ্বে বর্তমানে আইসিটি খাতে বড় অঙ্কের এফডিআই প্রবাহ রয়েছে। কিন্তু এ খাতে বৈশ্বিক এফডিআইয়ের এক শতাংশেরও কম পরিমাণ বাংলাদেশে আসে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তৈরি পোশাকের বাইরে দেশের ইলেকট্রনিকস, চামড়াসহ বিভিন্ন শিল্প অনেক ভালো করছে। এসব পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *