নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে চলতি মাসের যে কোনো সময় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বলে কথা হচ্ছে। তাদের এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ঢাকা ঘিরেই হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় বিএনপিসহ বিরোধীপক্ষের রাজপথের আন্দোলনের গতিপ্রবাহের দিকে নজর রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি রাজপথে বিএনপির ‘আন্দোলন মোকাবিলা’য় বড় শোডাউনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ‘ছাত্র-যুব’ সমাবেশের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এ ছাড়া আরও নানা মোড়কে লাগাতার কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিরোধীপক্ষের সমাবেশ ও শোডাউনের বিপরীতে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেছাসেবক লীগের উদ্যোগে এই সমাবেশ ও
কর্মসূচিগুলো পালন করা হবে। এর সূত্রপাত হবে ঢাকা থেকে। এ মাসের মধ্যেই তারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়েও সমাবেশ করবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া শোকাবহ আগস্ট মাসে বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে রাজপথে সহিংস আচরণ করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের
মধ্যে। এমন প্রেক্ষাপটে বিরোধীপক্ষকে মোকাবিলায় শোকের মাসে দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতেও ‘বড় শোডাউন’ দিয়ে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ। এর পর সেপ্টেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত জেলা ও উপজেলায় নির্বাচনী জনসংযোগ-সমাবেশ করবে বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, এসব সভা-সমাবেশের কোনো কোনোটিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা অংশ নিতে পারেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষ্য, নির্বাচন সামনে রেখে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবিলার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের প্রচার ও বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের ‘অপশাসন’ তুলে ধরে ভোটারদের আকৃষ্ট করা হবে। তাদের ভাষ্য, তরুণ ভোটাররাই আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট।
চলতি বছরের শুরু থেকেই পুরোপুরি নির্বাচনমুখী আওয়ামী লীগ। তবে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির নির্দেশনা আসে গত বুধবার দলের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের যৌথ সভায়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়- দেশ এখন নির্বাচনমুখী। সব দল নির্বাচন নিয়ে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগকেও এগোতে হবে। এরই অংশ হিসেবে তরুণ-যুবসমাজকে নির্বাচনমুখী করতে সব কর্মসূচি নিয়ে এগোতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করারও নির্দেশনা আসে ওই সভা থেকে।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, টানা তিন মেয়াদসহ মোট চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের সময়ে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তার প্রত্যক্ষদর্শী এ দেশের তরুণ ভোটার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে তরুণ সমাজের ভূমিকা ছিল। গত ৫ বছরে তরুণ ও যুবসমাজের সামনে আরও চমকপ্রদ উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। ফলে এদের নির্বাচনী ট্রেনে যুক্ত করাও আওয়ামী লীগের বড় লক্ষ্য। ছাত্র ও যুব সমাবেশ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে কাজ করবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ছাত্র-যুব সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শুরুটা ঢাকাতেই হবে। তবে বিএনপির কর্মসূচির বিষয়টি আমলে নিয়ে তা একদিন বা দুদিন পেছাতে পারে।
দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনের প্রতি তরুণ ও যুবসমাজের আগ্রহ বাড়াতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের ধারণা দিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমন্বয়ে ছাত্র-যুব সমাবেশ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই কর্মসূচি শুরু হবে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরজুড়ে এই কর্মসূচি চলবে। আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসে শোকের কর্মসূচি হবে, শোকর্যালি ও শোক সমাবেশ হবে। এর পর দেশজুড়ে নির্বাচনী জনসংযোগ হবে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে আওয়ামী লীগ। এ দেশে এসব অপশক্তিকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহ এক সঙ্গে দেশবিরোধী অপতৎপরতা মোকাবিলা এবং নির্বাচনী গণসংযোগ অব্যাহত রাখবে। যতদিন দেশবিরোধী অপশক্তি অপতৎপরতা অব্যাহত রাখবে, ততদিন আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা হবে- যেন সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের উদ্ভব না হয়। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে চলমান শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’
ছাত্র-যুব সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা তো ইতোমধ্যে সারাদেশে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ নামে প্রোগ্রাম করছি। উপজেলা, জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করছি। বিভাগীয় পর্যায়ে এখনো শুরু করিনি। ঢাকাতেও হবে। এর সময় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।’
ছাত্র-যুব সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসব কর্মসূচির বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের ডেকে নিয়ে নির্দেশনা দেবেন। এই নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি হবে।’ ঢাকায় এবং সারাদেশে ছাত্র-যুব সমাবেশ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচি হবে।’
বিএনপির এক দফা কর্মসূচি সামনে রেখে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি সব সময় আছে। বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে কোনো অরাজকতা করতে চায়, সেটা সকাল, দুপুর কিংবা রাত হোক আমরা তাৎক্ষণিক মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকব। শান্তির সমাবেশ ও শান্তির জন্য বাংলাদেশ সেøাগানকে উপজীব্য করেই আমরা রাজপথে থাকব।’