নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ‘বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াশিউর রহমান। এদিকে, প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। তাদের দাবি স্থায়ীভাবে তাকে বরখাস্ত করা হোক।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ.স.ম শফি মাহমুদের স্বাক্ষরিত পত্র থেকে জানা যায়, ‘প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষিকার অসামাজিক ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অধিকাংশ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল। এছাড়াও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক পরবর্তীকালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাকে বুধবার তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেখেছি। স্কুল কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াশিউর রহমান বলেন, ‘বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কিছু ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এ নিয়ে গত বুধবার বিকেলে উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি এবং স্কুলের কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৃহস্পতিবার থেকে প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও সহকারী শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
উপজেলার ‘বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। এমন কিছু ভিডিও গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্কুলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদের একের পর এক এমন নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফুঁসে উঠে এলাকাবাসী। শিক্ষকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়। ঘটনার পর বুধবার বিকেলে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন। অন্য দুই সদস্য হলেন- উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার অঞ্জন কুমার কুন্ড ও বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম।
এদিকে পারসোমবারী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শেখর আহম্মেদ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এসএম জাকির হোসেন এবং বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বেগুন জয়ার উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। কিন্তু স্কুল তালাবদ্ধ থাকায় এবং কোন শিক্ষক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন না। এজন্য জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ছাড়া কারও সাথে কথা বলতে পারেননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে স্থায়ী ভাবে বরখাস্তসহ দৃস্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে দুই শিক্ষক পলাতক রয়েছে।