বিচ্ছেদ হয়নি, সেপারেশনে আছেন তারা

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

অস্কারজয়ী ইরানি চলচ্চিত্র ‘আ সেপারেশন’। সিনেমাটির শেষ দৃশ্য বেশ স্মরণীয়। মা–বাবার বিচ্ছেদ মামলা পারিবারিক আদালতে গড়িয়েছে। শুনানি শেষ। দম্পতির কিশোরী কন্যাকে ডাকলেন বিচারক। বাইরে অপেক্ষায় আছেন বিচ্ছেদের রায়-প্রত্যাশী দম্পতিরা। প্রতীক্ষার মুহূর্তগুলো যেন আর কাটছে না। ভেতরে বিচারক কন্যাটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তার কিছু বলার আছে কি না। কন্যাটির উত্তর— ‘আমাকে কি বলতেই হবে?’

সিনেমাটির এখানেই সমাপ্তি। কিন্তু দর্শকের কানে বেজে ওঠে শেষ মুহূর্তটির শেষ সংলাপ- ‘আমাকে কি বলতেই হবে?’

একটি দম আটকে দেওয়া অনুভুতির জন্ম দেয় সংলাপটি। কারণ, কিশোরীটির একটি প্রশ্নের পেছনে অসংখ্য উত্তর লুকিয়ে রয়েছে।

বিচ্ছেদ এখন সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। তবে সমাজের চিত্র সবার সামনে উঠে না আসলেও প্রায়ই আমাদের শোবিজে অনেক তারকাদের সংসারে বিচ্ছেদের সুর বাজতে শোনা যায়। কেউ কেউ নিজের জীবনকে সহজ করতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এক সময়ের মধুর প্রেম, লুকিয়ে বিয়ে, দারুণ মুহুর্ত- একটা সময় বিচ্ছেদে গিয়ে শেষ হয়। কিন্তু মাঝখানে থেকে যায় নিষ্পাপ সন্তান।

শোবিজে বর্তমানে নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে। তা হচ্ছে কোন কোন তারকা বিচ্ছেদে না গিয়ে, আছেন সেপারেশনে। বিশেষ করে ঢালিউড তারকা পরীমণি-শরিফুল রাজ এবং শাকিব খান ও শবনম বুবলী এমন সম্পর্কেই আছেন।

দুই তারকা জুটির ঘরেই রয়েছে ফুটফুটে নিষ্পাপ সন্তান। যারা এখনো বোঝেই না বিচ্ছেদ কী, সেপারেশন কী? বাবা-মা কেনই বা আলাদা থাকছেন তাও তারা বোঝে না! তাদের অবস্থাও ‘আ সেপারেশন’ সিনেমার শেষ সংলাপটির মতই।

নিজেদের আনন্দ, নিজেদের মধুর সময়গুলো একটা সময় বিষ হয়ে যাচ্ছে। আর মাঝখানে বাবা-মায়ের স্নেহ আর সুন্দর স্মৃতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব তারকা কিট।

বেশকিছুদিন ধরেই ঢালিউডে দুটি বিষয় বারবার সামনে উঠে আসছে। একটি শাকিব-বুবলী ইস্যু, অন্যটি পরীমণি-রাজ দ্বন্দ্ব। এই চার তারকার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো এতোই আলোচনায় থাকছে যে সিনেমার খবর পেছনে পড়ে যাচ্ছে। একটা সময় মধুর সময় কাটালেও এখন তারা কেউই কারও চেহারা দেখতে চাইছেন না। উল্টো মিডিয়ার সামনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন আরেকজনকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন, কড়া ভাষায় ব্যক্তিগত জীবন সামনে আনছেন। এমনকি কারও কারও চরিত্র হননেরও চেষ্টা চলছে।

তারকাদের এই কাণ্ডে দর্শক, ভক্তরাও মজা নিচ্ছেন। বিভিন্ন সময় তারকাদের দেওয়া পোস্টে ভক্তদের মন্তব্যগুলো দেখলে সে প্রমাণই পাওয়া যায়।

বিয়ে, পরিবার, সন্তানপালন ইত্যাদি বিষয়ের গবেষক ও লেখক বারবারা ড্যাফো হোয়াইটহেড ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ডিভোর্স কালচার’ নামের এক বইতে লেখেন, ১৯৫০ দশকে পৃথিবীর অধিকাংশ অসুখী দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাত না সন্তানদের কারণে আর সামাজিক দৃষ্টিতে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে, তবু তারা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অসুখী সম্পর্কটিই টিকিয়ে রাখত।

বাস্তবতা এই যে বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে দাম্পত্য সম্পর্কে জটিলতা বাড়বে, বিবাহবিচ্ছেদও বাড়বে। কিন্তু বাবা-মাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে তাদের সন্তানদের কী হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *