আন্দোলন ভাবনা নিয়েই উদযাপন করবে

Slider বাংলার মুখোমুখি

সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটিই শেষ ঈদ। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় নিয়ে এবারের ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপিসহ সরকারবিরোধী নেতাকর্মীরা। অবশ্য ঈদে নেতাকর্মীদের ‘সাবধান’ থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা এই মুহূর্তে সবাই কারাগারে। এখানে একটু পার্থক্য আছে কেউ চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। আমরা যারা বাইরে আছি তারা বৃহত্তর কারাগারেই। বৃহত্তর কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের কাছে আমার পরামর্শ, তারা যেন সাবধানতার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে। এসব দলের নেতাকর্মীরা রাজধানী ঢাকা ও নিজ এলাকা মিলিয়ে ঈদ করবেন। যারা এলাকায় যাবেন তারা আন্দোলনের কারণে দ্রুতই ঢাকামুখী হবেন। গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় দলের নেতাকর্মীদের কোরবানি ঈদের পর

দ্রুত ঢাকায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সবাই যদি ঢাকায় একসঙ্গে আসেন আর বাংলাদেশের মানুষ ঢাকার দিকে আসা শুরু করে, তা হলে কী হবে বোঝেন! যদি এটা বোঝেন, তার জন্য প্রস্তুত থাকেন।

চলমান আন্দোলনে বিগত দিনের মতো ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে বাধা সৃষ্টি করা হতে পারে আশঙ্কা করছে বিএনপি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসানীতির আলোকে পদক্ষেপও নিচ্ছে দলটি। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা, হামলা ও নেতাকর্মীদের নির্যাতনের ঘটনা এবং জড়িত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের তালিকা করতে গত ৩ জুন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি তথ্য সংগ্রহ কমিটি গঠন করে বিএনপি। এরই মধ্যে এই কমিটি বেশ কয়েকটি ঘটনায় ৩৩ পুলিশ সদস্য এবং ১০ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে দায়ী করে বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে। রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিটি ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও, ছবি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংযুক্ত করা হয়েছে।

দূতাবাসগুলোতে দেওয়া বিএনপির ওই চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে যেতে বাধা দেওয়ার এ ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ। কারণ এতে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বড় হুমকি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অন্য দেশগুলো জানতে চাইলে আমরা তাদের জানাই। এটা তারই অংশ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই অবস্থায় চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষক, তাঁতিসহ সব পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে ঈদের পর রাজধানী ঢাকার বাইরে ১৪টি সমাবেশ করা হবে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংঠনের যৌথ ব্যানারে।

এর মধ্যে ৬ জেলায় শ্রমিক-কর্মচারী সমাবেশ হবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ব্যানারে। চট্টগ্রাম দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হবে। বাকি সমাবেশ হবে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে।

জাতীয়তাবাদী কৃষকদল, শ্রমিকদল, মৎস্যজীবী দল ও তাঁতী দলের যৌথ উদ্যোগে আগামী ১২ জুলাই নোয়াখালী থেকে ‘কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতি মেহনতি মানুষের পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করবে। এ কর্মসূচি দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, যশোর, হবিগঞ্জ এবং বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে।

গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম থেকে তারুণ্যের সমাবেশ যৌথভাবে শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। ২২ জুলাই রাজধানী ঢাকার সমাবেশের মধ্যদিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৯ জুন বগুড়ায় ও ২৪ জুন বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৯ জুলাই সিলেটে ও ১৭ জুলাই খুলনায় সমাবেশ হবে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর সরকার বেশ চাপে আছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আগের মতো বিএনপির কর্মসূচিতে বাধার সৃষ্টি করছে না। এই অবস্থায় চূড়ান্ত আন্দোলন সফল করতে বিএনপি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এবারের ঈদে নেতাকর্মীদের বড় অংশের এসব কর্মসূচি নিয়েই বেশি সময় কাটবে।

গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজায় ভাই-বোনসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বড় ছেলে তারেক রহমান ও তারা পরিবার এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। পরের দিন তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অসুস্থ, ভিসা হাতে পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ মঙ্গলবার তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন, ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদীর পলাশে গ্রামের বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় শেষে ঢাকায় আসবেন। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্যদের মধ্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমেরিকায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের শিলংয়ে, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুক্তরাজ্যে ঈদ উদযাপন করবেন। ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেকেই ঈদে ঢাকায় থাকবেন। ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও বরকতউল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে ঈদ করবেন।

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে, হাবিব উন নবী খান সোহেল, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বরিশালে, সদস্যসচিব শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী লক্ষ্মীপুরে ঈদ করবেন।

মহানগরের আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার ঢাকায় ঈদ করবেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাসহ অনেকেই এখন পর্যন্ত কারাগারে আছেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে, মেহবুবের রহমান শামীম চট্টগ্রামে, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ মুন্সীগঞ্জে, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু মুন্সীগঞ্জে, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জামালপুরে, তাবিথ আউয়াল ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন।

কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জে, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ড. মোর্শেদ হাসান খান, আসাদুল করিম শাহিন, মুনির হোসেন ঢাকায়, তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোরে, আশরাফ উদ্দীন বকুল নরসিংদীতে ঈদ করবেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, আমি মনে করি শেখ হাসিনা সরকারকে হটাতে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি আসবে। এবারের ঈদে সেই চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হয়ে উঠবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, এবারের ঈদে নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *