নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেও ওলামা লীগের কর্মকাণ্ডে স্বস্তিতে থাকতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ওলামা লীগ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বারবার বিব্রত ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। নতুন করে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের একটি ‘বিতর্কিত’ ভিডিও নিয়ে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ওলামা লীগের যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে অনেক বিতর্কিত লোক রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটির একটি অংশ। এর প্রতিবাদে আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন এ অংশের নেতাকর্মীরা।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ও নারী শিক্ষা নিয়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্যসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা ওলামা লীগের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন। ওলামা লীগের ‘অভিভাবক সংগঠন’ থেকে সরেও দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও আসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত ২০ মে সংগঠনটির সম্মেলনের মাধ্যমে ২৬ সদস্যের নতুন কমিটি হয়। এতে মাওলানা কেএম আব্দুল মমিন সিরাজীকে সভাপতি ও মো. আমিনুল হককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ওই দিন (২০ মে) ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আপনারা (ওলামা লীগ) চাঁদাবাজি করে দুর্নাম কামাবেন না। এটা অতীতে ঘটেছে। অনেকে করেছে, আপনারা সবাই জানেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রোগ্রাম করবেন, পয়সা না থাকলে আমাকে বলবেন। আমি নিজে নেত্রীকে বলব। নেত্রী আপনাদের সব কিছু পূরণ করবেন। ওলামা লীগকে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত ও সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
ওবায়দুল কাদেরের এমন নির্দেশনা ও হুশিয়ারির এক মাস যেতে না যেতেই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠে। সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হকের ‘অশালীন ভিডিও’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার সংগঠনের অনেক নেতা সভাপতির রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। লিখছেন ফেসবুকেও।
আওয়ামী ওলামা লীগ প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা চেয়ে আসছিল। কিন্তু সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে এই মর্যাদা পায়নি। নারীশিক্ষা ও পহেলা বৈশাখকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিতর্কে জড়ায় ওলামা লীগ। এ বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হয় আওয়ামী লীগও। পরে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়ে ওলামা লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার বিষয়টি পরিষ্কার করে।
পরবর্তী সময়ে ওলামা লীগের নেতারা বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য ও বিবৃতি দিতে থাকেন। এমনকি প্রকাশ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনাও ঘটে। এরপরও সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওলামা লীগকে কাছে টানে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ডে ফের ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এক নেতা বলেন, ‘এই সংগঠনটির শুরুর একটা মহৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু প্রায় তিন যুগ ধরে অব্যাহতভাবে দলের আদর্শপরিপন্থি কাজে যুক্ত থাকছে। সংগঠনটির দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারাও ভালো ভূমিকা রাখতে পারছেন বলে মনে হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। এখন এরা যদি ফের দলকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে, তাহলে আওয়ামী লীগের শত্রুপক্ষ কথা বলার একটা বড় জায়গা পেয়ে যাবে। সুতরাং খুব দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
ওলামা লীগের সভাপতি আবদুল মমিন সিরাজী আমাদের সময়কে বলেন, ‘ওলামা লীগের যে কমিটি হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুমতি নিয়েই হয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে যারা বিতর্কের সৃষ্টি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের ভিডিও যারা বিকৃতি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। যারা আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে মন্তব্য করেন, তাদের উদ্দেশে বলব আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যাচাই-বাছাই করেই দায়িত্ব দিয়েছেন।’