নৌকার উদ্বেগ হাতপাখা

Slider সারাদেশ

খুলনা সিটিতে গতকাল ছিল নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। এদিন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক নগরীর খালিশপুরে গণসংযোগ করেন – আমাদের সময়

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বসিক) নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। আগামীকাল সোমবার ভোট হবে এখানে। এখানকার ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম।

এদিকে ভোটে বিএনপি না এলেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে হাতপাখার প্রার্থী তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। বর্তমান মেয়র ও খোকন সেরনিয়াবাতের ভাতিজাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় প্রথম থেকে দলের বড় একটি অংশ নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফলে নির্বাচনী মাঠ এবং ঘরের অভ্যন্তরে নৌকার প্রার্থীকে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। যদিও শেষমেশ তিনি দলের সবাইকে নির্বাচনী মঞ্চে আনতে সক্ষম হন।

এবারের নির্বাচনে নগরীতে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, মাইকিং সব কিছুতেই ছেয়ে গেছে নগরী।

একদিকে বরিশালে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের ভোট কম। অন্যদিকে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডও নৌকার ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে জয় নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে নৌকার প্রার্থীকে।

বরিশালে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখাকে। তারাও প্রচারণায় সরব। তাদের কর্মীরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নিঃস্বার্থভাবে দলের জন্য কাজ করেছেন প্রথম থেকেই। কিন্তু এসব প্রচার কাজে নিয়োজিতদের অনেকেই নগরীর ভোটার নন। কেন্দ্রসহ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা, বিশেষ করে চরমোনাই মাদ্রাসা থেকে আসা কর্মীরাই তাদের প্রধান প্রচারকর্মী। বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের ভোটব্যাংক থাকলেও নগরীতে তাদের খুব বেশি ভোট নেই। এ কারণে তাদের প্রধান ভরসা বিএনপির ভোটব্যাংক। তবে হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বিএনপির নারী ভোটারদের বেশ কিছু ভোট পাবেন, কিন্তু বিএনপির পুরুষ ভোটারদের ভোট তেমন পাবেন না। কারণ সচেতন বিএনপি কর্মীরা ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে চরমোনাই ইউনিয়নে দলের বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের ওপর হামলার কথা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ান।

প্রচারণায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি লাঙল প্রতীক নিয়ে ২০১৮ সালেও নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় তার অবস্থান স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে সে থেকে তিনি নিয়মিত বরিশালের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ইকবাল হোসেন তাপস আওয়ামী লীগের ‘অভ্যন্তরীণ’ কিছু ভোট পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাপসের আপন ছোটভাই তসলিম উদ্দিন বরিশাল জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিএনপি ঘরানার বেশ কিছু ভোট টানতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপরদিকে দল থেকে বহিষ্কার আদেশের পর যেন অনেকটাই স্বাচ্ছন্দে প্রচারণার মাঠে রয়েছেন বিএনপি পরিবারের সন্তান ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন। তিনি টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। সাবেক এই ছাত্রদল নেতা বর্তমানে দলের কোনো পদে না থাকলেও তাকে বহিষ্কার করায় অনেকটা দলের ছায়া প্রার্থীর ঘোষণা দেওয়ার মতো বলে মনে করছেন বিএনপি কর্মীরা। নগরের বাসিন্দা ও ভোটার জাকারিয়া খান বলেন, যে স্কুলের ছাত্রই আমি না, সেই স্কুল থেকে যদি টিসি দেওয়া হয় তাহলে বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়।

বসিক নির্বাচনে মোট ১৬৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪২ জন। ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪ কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন।

নিরাপত্তার চাদরে মোড়া বরিশাল

নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা। নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছেন বিজিবি, র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকার সব অফিস-আদালত, মিল-কারখানা, স্কুল-কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ৪ হাজার ৪০০ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩০০ পুলিশ রয়েছে। এছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ১০৬ কেন্দ্র

বসিক নির্বাচনের ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, পুলিশের হিসাবে ৭০টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রার্থীরা যেসব কেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেগুলো যুক্ত করে ১০৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে।

দলীয় ভোটারদের ঠেকাতে চায় বিএনপি

বসিক নির্বাচনে প্রার্থিতা ঠেকাতে না পেরে ১৯ জনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এবার দলীয় ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে মাঠে নেমেছে বিএনপির স্থানীয় নেতারা। দলটি চাইছে শুধু প্রার্থী নয় সমর্থকদেরও ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করতে। এটি এই মুহূর্তে তাদের আন্দোলনের অংশ বলে মনে করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *