বাংলা-ইংরেজির হোয়াইটচ্যাপেল

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনে হোয়াইটচ্যাপেল রেলওয়ে স্টেশনের পাশঘেঁষেই রয়েছে সমৃদ্ধ এক লাইব্রেরি। নাম আইডিয়া লাইব্রেরি হোয়াইটচ্যাপেল। এ লাইব্রেরির সামনের দিকে বড় অক্ষরে লেখা ‘বাংলা’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে হোয়াইটচ্যাপেলে বাংলা ভাষায় লেখা অনেক সাইনবোর্ড তৈরি করা হয়েছে। শুধু লাইব্রেরিতেই নয়, প্রবেশদ্বারে রেলওয়ে স্টেশনের নাম ইংরেজির পাশেই বাংলায় লেখা ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন’, ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে স্বাগতম’ এমন সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেনে ‘বাংলা টাউন’ সাইনবোর্ড রয়েছে।

হোয়াইটচ্যাপেলের অধিকাংশ বাংলাদেশি মালিকানাধীন দোকানগুলোতেও ইংরেজি ও বাংলাÑ উভয় ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড দেখা যায়। টাওয়ার হ্যামলেটের এই এলাকায় যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। জানা গেছে, টাওয়ার হ্যামলেটস ও বাঙালি সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে এখানে বাংলা ভাষা আলাদা মর্যাদা পেয়েছে।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন হোয়াইটচ্যাপেল। এখানে মাটির নিচ ও ওপর দিয়ে চলাচল করা ট্রেনে লন্ডনের যেকোনো জায়গায় সহজেই আসা-যাওয়া করা যায়। প্রথমবারের মতো কেউ এলে হোয়াইটচ্যাপেলকে বাংলাদেশের কোনো এলাকা মনে হতে পারে! এমন একটি জায়গায় ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য সময় কাটানোর আদর্শ স্থান হতে পারে আইডিয়াল লাইব্রেরি হোয়াইটচ্যাপেল।

গত বৃহস্পতিবার হোয়াইটচ্যাপেল লাইব্রেরিতে প্রবেশ করার পরই চোখে পড়ল নানা সেকশনে ভাগ করা জগত বিখ্যাত সব বইয়ের সমাহার। ফিকশন, নন-ফিকশন, হেলথ, স্পোর্টস, উপন্যাস, কবিতা, ছোট গল্পÑ অসংখ্য বই সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে এ লাইব্রেরিতে। চোখ পড়ল বাংলা ভাষায লেখা বইয়ের সেকশনেও। সেখানে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে বাংলা ভাষায় নন্দিত অনেক লেখকের বই সযত্নে সংগৃহীত রয়েছে।

যে কেউ চাইলে নিরিবিলি পরিবেশে বই পড়ে দিব্যি সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবে। আর ঠিক সেখানে বিশেষ নজর কাড়লÑ স্পোর্টস সেকশনের বইগুলো। ক্রিস গেইলের ‘সিক্স মেশিন : আই ডু’ন্ট লাইক ক্রিকেট… আই লাভ ইট’, কেভিন পিটারসনের ‘কেভিন পিটারসন অন ক্রিকেট’, ‘কেপি ক্রিকেট জিনিয়াস’, বেন স্টোকসের ‘ফায়ারস্টার্টার : মি. ক্রিকেট অ্যান্ড দ্য হিট অব দ্য মোমেন্ট’, শচীন টেন্ডুলকারের প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে : মাই অটোবায়োগ্রাফি’, ইএসপিএনক্রিকইনফোর ‘শচিন টেন্ডুলকার : দ্য ম্যান ক্রিকেট লাভড ব্যাক’সহ ক্রিকেট, ফুটবল, রাগবি, বক্সিংসহ নানা খেলা ও খেলোয়াড় সম্পর্কিত বইয়ের বিপুল সংগ্রহ রয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষার বইও রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ‘বক্সার দ্য গ্রেট মোহাম্মদ আলী’। বইটির লেখক জব্বার আল নাঈম।

মোহাম্মদ আলী সম্পর্কিত বইটির লেখনি চমৎকার। কীভাবে সংগ্রাম করে কিংবদন্তি খেলোয়াড় উঠে এসেছেন, তা লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন জব্বার আল নাঈম। তিনি লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সব খেলোয়াড়ের দিকে একবার লক্ষ্য করো। ছোটবেলায় তাদের লক্ষ্যই ছিল খেলোয়াড় হওয়ার। ফুটবলের পেলে, ম্যারাডোনা, রিভালদো, রোনালদিনহো, লুইস ফিগো, জিনেদিন জিদান, ডেভিড বেকহাম, ফ্রান্স বেকেনবাওয়ার, ম্যাথিউস। এছাড়া ইকার ক্যাসিয়াস, জাভি ফার্নান্দোজ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, নেইমার, ওজিল, এমবাপ্পে, পগবা, সুয়ারেজ, কাভানি, মোহাম্মদ সালাহ। তাদের সবাই ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছেন ফুটবলার হওয়ার। বড় হয়ে তাই হয়েছেও।’

এভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তি মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ রফিক, মোস্তাফিজুর রহমানদের উদাহরণ টেনে নতুন প্রজন্মের জন্য উৎসাহ-বার্তা দিয়েছেন লেখক। অভিন্ন লক্ষ্য, একাগ্রতা, ইচ্ছা শক্তি মানুষকে কাক্সিক্ষত সাফল্যের সোপানে পৌঁছে দেয়। বক্সার মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে লেখা বইটির মতোই হোয়াইটচ্যাপেলের লাইব্রেরিতে থাকা অসংখ্য বাংলা ভাষায় লেখা বই পড়ে শাণিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। হোয়াইটচ্যাপেলের লাইব্রেরিতে এসে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে দেখা হলো। ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারের মাস্টার্স অব সাইন্স ইন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেম সিকিউরিটি বিষয়ের ছাত্র মো. ইয়াহিয়া চৌধুরী জানালেন, অবসর সময় পেলেই এ লাইব্রেরিতে বই পড়তে আসেন। এমন একটি লাইব্রেরিতে বাংলা বইয়ের বিপুল সংগ্রহে গর্বিত তিনি। তার মতো যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান আহরণের জায়গায় পরিণত হয়েছে হোয়াইটচ্যাপেলের লাইব্রেরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *