গাজীপুরে বিজয়ী হতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন প্রার্থীরা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে প্রার্থীরা বিজয়ী হতে ক্রমেই মরিয়া হয়ে উঠছেন। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদিনই ভোটারদের খোঁজে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের ছুটছেন তারা। সর্বশক্তি ও কৌশল নিয়োগ করে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নাগরিক সেবা ও উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট নয়জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সাথে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র/চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তিনি নগরীর উন্নয়নে তার ছেলের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগর উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচনে এ দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতার ছেলে শাহনূর ইসলাম রনি।

লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন-বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো: রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনূর ইসলাম রনি এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে হারুন অর রশীদ নির্বাচনী মাঠে লড়াই করছেন।

মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগ
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান শনিবার বিকেলে মহানগরীর ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড, কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি থানার সুরাবাড়ি, সুলতান মার্কেট, ভবানিপুর বটতলা মাঠ, পানিশাইল তিন রাস্তার মোড়, হাতিমারা এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

পথসভায় আজমত উল্লা খান বলেন, ‘আমি কাজ পছন্দ করি। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে একটি স্বচ্ছল সমাজ ও স্বচ্ছ সিটি করপোরেশন গঠন করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজকে অগ্রাধিকার দেব। আপনারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন, আমি আপনাদের একটি পরিকল্পিত ও সুন্দর নগর উপহার দিব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার ছেলে জাহাঙ্গীরকে সাথে নিয়ে শনিবার নগরীর টঙ্গী এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। টঙ্গীর দু’টি থানা এলাকা ঘুরে তিনি পূবাইল ও সদর থানায় গণসংযোগ করেন। তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাজার, মার্কেট, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় মা ও ছেলে একাধিক পথ সভায় বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন শনিবার মহানগরীর সদর থানার জয়দেবপুর, শিমুলতলী, মারিয়ালী, নাওভাঙ্গা, লক্ষ্মীপুরা, ধীরাশ্রম এলাকায় দিনভর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনিও একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

শনিবার সকালে থেকে মাজুখান, করমতলা, হারবাইদ, বিন্দান, মীরের বাজার, পূবাইল বাজার, ভাদুন, মেঘডুবি, ইছালি, নন্দিবাড়ি, কলের বাজার, হায়দরাবাদ এলাকায় গণসংযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি। এ দিন বিকেলে নগরীর খরতৈল, সাতাইশ, গুটিয়া, সাতাইশ চৌরাস্তা, তিলার গাতি, শিংবাড়ি, মুদাফা, দেওড়া এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নগরীর কাশিমপুর থানার ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি নগরীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গাসিক নির্বাচনে অংশ নেয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরাও বসে নেই। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তারাও গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করে দিন-রাত নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, গাসিক নির্বাচনে আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য মোট ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ তিন হাজার ৪৯৭টি। এর মধ্যে ৪৯১টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *