ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বাংলাদেশে অন্তত ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হেনেছিল।
সেই সিডরের মতোই ঘূণিঝড় ‘মোখা’ বিধ্বংসী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
মোখার সবশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা নাগাদ আরও শক্তি অর্জন করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হতে পারে। শনিবার থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব বৃষ্টি শুরু হবে। এ সময় ভারী বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে পারে।’
এই ঘূর্ণিঝড় সিডরের মতো বিধ্বংসী হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘সিডরের যেসব বৈশিষ্ট্য ছিল এটিও সেদিকেই যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র এখন ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে। গত ৩ ঘণ্টায় এটি ২৪ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। গতকাল এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার। গতি পরিবর্তন হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়টি রোববার ঠিক কখন উপকূলে আঘাত হানবে সেটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।’
আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, দক্ষিণূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১১.৬০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৯০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫৫ কিলোমিটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়াবিদ আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে আগামীকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিডর এ যাবৎকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী সিডর। বঙ্গোপসাগরের কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে উৎপত্তির পর ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে ঘূর্ণিঝড়টি। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৬০ কিলোমিটার, যা সাফাইর-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের সমতুল্য।
রেড ক্রসের হিসাবে সিডরে ১০ হাজার মানুষ মারা গেছে বলা হলেও সরকারিভাবে ৬ হাজার বলা হয়েছিল। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়াও ভারতের চেন্নাই, তামিলনাড়ু ও আরও রাজ্য সিডরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বাধিক। বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি—এ তিনটি জেলা ৫ মিটার (১৬ ফুট) উঁচু ঢেউয়ের আঘাতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। আর এ তিনটি অঞ্চলেই মৃতের সংখ্যা সর্বাধিক ৫ শতাধিক।