যত্রতত্র বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল নয়

Slider শিক্ষা


দেশে কতটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ি মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। শহর-গ্রামে যেখানে-সেখানে গড়ে উঠছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। চলছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই। খুপড়িঘরে পাঠদান, বইয়ের বোঝা, মনগড়া ফি আদায়, শিক্ষক নিয়োগবাণিজ্য তো আছেই। আবার প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরই এমপিওভুক্তি কিংবা জাতীয়করণের আন্দোলনে নামেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে যেখানে-সেখানে প্রাথমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য সংশোধন করা হচ্ছে বিধিমালা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, কোন এলাকায় জনসংখ্যা কত, স্কুলগামী শিক্ষার্থী কতজন; ওই এলাকায় কী ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আছে কিনা- এসব বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের পর স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন অনুমতি দেবে। বর্তমান বিধিমালায় নিবন্ধন ও পাঠদানের অনুমতির জন্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত আসতে হতো।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানান, সময়ের চাহিদানুসারে ২০১১ সালের বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধন হলে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি শৃঙ্খলায় আসবে। নিবন্ধন ও পাঠদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। নতুন বিধিমালা সম্পর্কে

জানা গেছে, যত্রতত্র বেসরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। যারা ইতোমধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদেরও সংশোধিত বিধিমালার আওতায় আসতে হবে। নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেতে নির্ধারিত ফরমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে। তিনি যাচাই-বাছাই করে আবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। জেলাপর্যায় থেকে পাঠদানের অনুমতি দেবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হবেন বিভাগীয় উপপরিচালক। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। নিবন্ধনের জন্য মেট্রোপলিটন ও বিভাগীয় শহরে ১৫ হাজার টাকা, জেলা শহরে ১০ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে ৮ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। প্রস্তাবিত সংশোধিত বিধিমালায় ৩৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।

মেট্রোপলিটন এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঠদানের অনুমতির জন্য পাঁচ হাজার টাকা, জেলা শহরের জন্য তিন হাজার ও উপজেলা পর্যায়ে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। পাঠদানের প্রাথমিক মেয়াদ হবে এক বছর।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, এ মন্ত্রণালয় থেকেই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। এ জন্য তারা ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বাংলা ও ইংরেজি) নিবন্ধন বিধিমালা-২০১১’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

জানা গেছে, এ নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। সভায় জানানো হয়, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে ২০১১ সালে টাস্কফোর্স হয়। টাস্কফোর্স নিবন্ধন সংক্রান্ত যে সুপারিশ করে, তা বিশেষজ্ঞদের কাছে কিছুটা জটিল ও দীর্ঘসূত্রতামূলক মনে হয়েছিল। ফলে এই বিধিমালা প্রণীত হলেও যথার্থভাবে কার্যকর হয়নি। এর মধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ি মাদ্রাসা। এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় উচ্চহারে বেতনের পাশাপাশি শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। বাণিজ্য হয় শিক্ষক নিয়োগে। এ ছাড়া এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। খুপড়িঘরে চলে পাঠদান। খেলার মাঠ তো দূরের কথা, এক কক্ষে গাদাগাদি করে বসে চলে পাঠদান। এমন পরিস্থিত উত্তরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে একটি শৃঙ্খলায় আনতে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে সভায় তুলে ধরা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *