ফিরলেও কি বিএনপির হাল ধরবেন তারা!

Slider জাতীয় রাজনীতি

fakrulSM_382846023

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কোনো মুহূর্তে মুক্তি পাচ্ছেন। সর্বশেষ তিন মামলার জামিন আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকায় ৭৮ মামলার আসামি ফখরুলের মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই।

ফখরুলের পর বিএনপির আরেক নিবেদিত প্রাণ রুহুল কবির রিজভীও শিগগিরই মুক্তি পেতে পারেন। কাশিমপুর কারাগারে বন্দি ৩৮ মামলার আসামি রিজভীর আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন তাকে মুক্ত করতে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না দিলে ঈদের আগেই মুক্তি পেতে পারেন তিনি।

অন্যদিকে ২৬ মামলার আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ অনাকাঙ্ক্ষিত এক ‘ট্রাজিক’ পরিণতির মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে অবস্থান করছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে। সবার প্রত্যাশা, মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সালাহ উদ্দিন বিলম্ব হলেও দেশে ফিরবেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঘরে ফিরলেও রাজনীতিতে কি ফিরবেন বিএনপির এই তিন পরীক্ষিত সৈনিক। ফিরে পাবেন কি তাদের আগের জায়গা? দলের প্রতি কমিটমেন্ট, পরিশ্রম, ত্যাগ, দায়িত্বশীলতা, আনুগত্য’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই তিন নেতার সঠিক মূল্যায়ন কি করতে পারবে বিএনপি?

দলটির একটি অংশের মতে, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সুপেরিয়র রেসপনসিবিলিটি’র কারণেই ক্লিন ইমেজের ফখরুলের দ্বিতীয় নিবাস হয় কাশিমপুর কারাগার।

নয়াপল্টন কার্যালয় বুকের পাজর দিয়ে আগলে রাখতে গিয়ে একই পরিণতি বহন করতে হয় রুহুল কবির রিজভীকে।

অন্যদিকে আপদকালীন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এক অনাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে।

সূত্র জানায়, অনিশ্চিয়তার দিকে ক্রমশ এগুতে থাকা ভগ্নদশায় পতিত বিএনপির হাল ধরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে আর সম্ভব নাও হতে পারে। বার বার কারাবরণ, শারীরিক অসুস্থতা এবং মতাদর্শ’র দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বসে থাকার আগ্রহ আর নাও দেখাতে পারেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফখরুল ছাড়া পেলেই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নেবেন।

প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিঙ্গাপুর যাবেন দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসার জন্য।

তবে আর এক সূত্র বলছে, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল থেকে ছাড়া পেলে সরাসরিই সিঙ্গাপুর যাবেন তিনি। অর্থাৎ মুক্তি পেলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে সময় লাগবে ফখরুলের।

তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও নীতিনির্ধাণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মত অনেক বিষয়ই আটকে আছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কারণে। তিনি বেরিয়ে এলেই বিএনপির চেয়ারপারসন কাজগুলোতে হাত দেবেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কেউ চাইলেই যেমন দায়িত্ব পান না। আবার দায়িত্বপ্রাপ্তরা চাইলেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে হয়তো ফখরুল কয়েকদিনের জন্য বাইরে থাকতে চাইবেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ম্যাডামের নির্দেশে তাকেই কাজ বুঝে নিতে হবে, এবং করতে হবে।

এদিকে নয়াপল্টন কার্যালয়কে নিজের বাড়ি-ঘর বানিয়ে ফেলা রুহুল কবির রিজভীর জামিনের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তার আইনজীবীরা। তারা বলছেন, একই ধরনের মামলায় শমসের মবিন চৌধুরী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেহেতু জামিন পেয়েছেন, রুহুল কবির রিজভীও জামিন পেয়ে যাবেন।

জানা গেছে, নতুন ২৪টি মামলার মধ্যে ইতিপূর্বে ৫টি মামলায় জামিন পেয়েছেন রিজভী। বাকি ১৯টির মধ্যে ৬টি মামলা হাইকোর্টে ফাইল হয়েছে। শুনানি শেষে এগুলোর আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। আর পুরনো ১৪টি মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।

এ প্রসঙ্গে রিজভীর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাধা না দিলে ঈদের আগেই জামিনে মুক্ত হবেন রিজভী আহমেদ। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসবেন তিনি।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় কারাবরণ করায় রুহুল কবির রিজভীও ক্লান্ত। ঝড়-বৃষ্টি-শৈত্যপ্রবাহ-আর তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে নয়াপল্টন কার্যালয় পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব নাও নিতে পারেন তিনি।

তাছাড়া তার অবর্তমানে নয়াপল্টন কার্যালয় পেয়েছে নতুন নেতৃত্ব। দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন পালন করছেন বিএনপি মুখপাত্রের দায়িত্ব।

ফখরুল-রিজভীর অবর্তমানে গত তিন বছর ধরে দলের আপদকালীন দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। দলের এই যুগ্ম মহাসচিব অদূর ভবিষ্যতে মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও গুঞ্জন উঠেছিলো দলীয় পরিমণ্ডলে।

কিন্তু অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে উত্তরার একটি বাসায় আত্মগোপনে থেকে দায়িত্বপালনকালে নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন।

সূত্রমতে, টানা দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর সালাহ উদ্দিনকে ফিরে পেয়ে তার পরিবার ও নিকটজন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাজনীতির মাঠে আর নামতে দেবেন না তাকে। সুতরাং আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিলং থেকে দেশে ফিরলেও পরিবারের চাওয়া উপেক্ষা করে বিএনপির রাজনীতিতে ফেরা খুব সহজ হবে না সালাহ উদ্দিনের পক্ষে।

সুতরাং, দলের অন্যতম তিন কাণ্ডারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ’র সেবা পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে বিএনপিকে। এমনকি এদের সেবা আর কোনো দিন নাও পেতে পারে বিএনপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *