লড়াই জমে ওঠার সম্ভাবনা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, দলের বিদ্রোহী হিসেবে বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপি পরিবারের সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ তিনজন মনোনায়নপত্র জমা দেওয়ায় অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হওয়ার আভাস মিলেছে। তিনজনের ভোটের হিস্যা এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের পর দেওয়া বক্তব্য থেকে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল মেয়র পদে এ তিনজন ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, গণফ্রন্ট, স্বতন্ত্র মিলে ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮২ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের এ বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ২ থেকে ৪ মে এবং আপিল নিষ্পত্তির সময় ৫ থেকে ৭ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে শেষ সময় ৮ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ৯ মে। নির্বাচনের ভাটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মে।

জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অপেক্ষায় আজমত উল্লাহ : মনোনয়পত্র দাখিল করা আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হিসেবে থাকবেন কি-না তা দেখার অপেক্ষায় আছি। আগামী ৮ মের পরই তা দেখা যাবে। জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীরা একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন চায়। আমি পত্রপত্রিকায় দেখেছি, জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা নমিনেশন সংগ্রহ করেছেন। উনি যেহেতু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাই বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি তার যদি আস্থা থাকে, দেশের উন্নয়নের প্রতি যদি আস্থা থাকে, তাহলে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

গতকাল দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হবে এবং জনগণের অংশগ্রহণটা নির্বাচনে নিশ্চিত হবে। আমার শক্তি জনগণ। আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। নৌকার পক্ষে জনতা আছে, তাই আমি নৌকার প্রতিপক্ষ কাউকে মনে করি না। তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ করছেন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই গাজীপুরের সর্বস্তরের জনতার মধ্যে একটা আমেজ, একটা উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তারা অপেক্ষা করছে নির্বাচনের দিনটার জন্য। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। নির্বাচন কমিশন সুষ্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। সুতরাং আমরা অবশ্যই বিশ^াস করি, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ ম-ল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হাদী শামীম, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

টিকে থাকার দৃঢ়তার কথা জানালেন জাহাঙ্গীর : তবে নির্বাচন থেকে সরে না যাওয়ার দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে সত্য উদঘাটনের। তিনি বলেন, যেকোনোভাবেই হোক নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবেন। তার ওপর যে অবিচার হয়েছে এর বিচারের ভার তিনি নগরবাসীর ওপর দিয়েছেন।

বিএনপির ভোটের দিকে তাকিয়ে রনি ঃ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির পদধারী কোনো নেতা মনোনয়নপত্র জমা না দিলেও বিএনপি পরিবারের সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর রনিই হয়ে উঠতে পারেন বিএনপির ভোটার-সমর্থকদের আশার আলো।

রনির বাবা নুরুল ইসলাম সরকার গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি। নুরুল ইসলাম সরকার দীর্ঘদিন ধরে কারান্তরীণ। তার ছেলে বিএনপি বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের পদে না থাকলেও তিনি বিএনপি পরিবারের লোক হিসেবে পরিচিত। রনির বাবা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুব ও শিল্পবিষয়ক সম্পাদক। রনির চাচা হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। গত নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে হাসান সরকার হুমকি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে তার ভাতিজা মেয়র পদপ্রার্থী হওয়ায় তার বিষয়ে বিএনপির মৌন সমর্থন রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

নুরের বাবা নুরুল ইসলাম সরকার ২০০৬ সালে টঙ্গী পৌরসভা নির্বাচনে কারাগারে থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আজমত উল্লাহ খান। এবার তাকে নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলেকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে।

সরকার শাহ নুর ইসলাম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। গাজীপুর মহানগর বিএনপিতে সরকার পরিবারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ফলে এ পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে তিনি নির্বাচনী মাঠ গরম করতে পারবেন বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে সরকার শাহ নুর ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। বিএনপির তৃণমূল থেকেও আমাকে মৌন সমর্থন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব সহজেই আমি নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমি বিএনপি পরিবারের ছেলে। আমার বাবা ও চাচা বিএনপির ত্যাগী নেতা। আমার বাবা দীর্ঘদিন কারাগারে। তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতা ছিলেন। আমি তার পক্ষ হয়ে নগরবাসীর সেবা করতে প্রার্থী হয়েছি।

আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, তিন প্রার্থীকে শোকজ : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে দুই মেয়র প্রার্থী এবং একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। নোটিশপ্রাপ্তরা হলেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন ম-ল ও নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সনজিৎ মল্লিক। গতকাল তাদের ওই কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

কারণ দর্শানো পৃথক চিঠিতে রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে লাগানো পোস্টার অপসারণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং এজন্য মাইকিং করা হয়। তারপরও সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছবি সংবলিত পোস্টার বিভিন্ন দেওয়ালে লাগানো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এখনও কাউন্সিলর প্রার্থী সঞ্জিৎ মল্লিকের পোস্টার শোভা পাচ্ছে, যা বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আর মনোনয়নপত্র জমাদানের দিন নির্ধারিত সংখ্যার বেশি লোকজন তথা শোডাউন করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিনকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *