বদলে যাওয়া ঈদ উদযাপন

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’-বাউল শাহ আব্দুল করিম শাহের এ গানের বক্তব্য একটু বদলে দিয়ে বলতে পারি ‘আগে কী সুন্দর ঈদ কাটাইতাম’। ঈদ উৎসবে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় ছিল যখন ঈদের দিন গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, শহরের মহল্লায় মহল্লায় আড্ডা বসত। ঈদের ছুটিতে এ আড্ডায় মেতে ওঠা ছিল খুব সাধারণ ঘটনা।

কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। যোগাযোগ করতে এখন আর কোথাও সশরীরে উপস্থিত হতে হয় না; আড্ডা চলে ফেসবুক, ফোনেই। এ কারণে ঈদ আড্ডার চির পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। ঈদ উদযাপনে ঈদ আড্ডার প্রয়োজনীয়তা এখন অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। সেকালের সঙ্গে একালের ঈদের যে পার্থক্য তার মধ্যে অন্যতম এই ঈদ আড্ডার অনুপস্থিতি। ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যুগে ঈদ উৎসব হয়ে গেছে ভার্চুয়াল।

আগে প্রতি গ্রামে ঈদের জামাত হতো না, কয়েক গ্রাম মিলে একটি জামাত হতো। কয়েক গ্রামের মানুষ একত্রিত হওয়ার সুযোগ পেত ঈদ জামাতকে ঘিরে। এছাড়া ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদ কার্ড আদান-প্রদানের রীতি ছিল। এখন প্রায় গ্রামেই একাধিক ঈদের জামাত হয়। ফলে নিজেদের মধ্যে বন্ধন কমে যাচ্ছে।

শুভেচ্ছা বিনিময় আর ঈদ উৎসব আয়োজনে এসেছে বৈচিত্র্য। আনন্দের ধরন আর আগের মতো নেই। মোবাইল ফোনে মেসেজ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় সারেন অনেকে। সম্পর্কে কৃত্রিমতা এসে গেছে। অনেক কিছুই হয়ে গেছে কমার্শিয়াল। একটা কল দিয়ে কথা বলারও সময় মেলে না যেন। কারণ বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন রকম বন্ধু-শৈশব বন্ধু, ফেবু বন্ধু, স্কুল-কলেজের বন্ধু, কমার্শিয়াল বন্ধু, আড্ডার বন্ধু ইত্যাদি। বন্ধুর সংখ্যা বাড়লেও বা অর্থ-প্রাচুর্য ঈদ উৎসবে ভিন্নমাত্রা আনলেও আনন্দ ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই।

ঈদ উপলক্ষ্যে শহর থেকে গ্রামে গিয়ে আমরা আত্মীয়স্বজন, শৈশব বন্ধুদের সময় কম দিচ্ছি। সেই সময়টা কেড়ে নিচ্ছে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অথবা কোনো ক্ষেত্রে টিভির সিরিয়াল। শিশুদের ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে। শহরের মতো গ্রামেও শিশুদের খেলাধুলার জায়গা কমে গেছে। ফলে ঈদ উৎসবে বাড়তি আনন্দ পাচ্ছে খুব কম শিশুই। আগে শিশুরা, এমনকি বড়রাও ঈদ বা সামাজিক অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকত। এখন সেটা বিরল ঘটনায় পরিণত হচ্ছে।

ঈদ উৎসবের উপাদানগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য, ভিন্নতা ও নতুনত্ব থাকে। সময় আসলে বড় ফ্যাক্টর। তবে এগুলো আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আবহমানকালের রীতিনীতি বদলে দিতে পারবে না। ঈদে সবাই নতুন নতুন পোশাক পরবে, সব ভেদাভেদ ভুলে যাবে, সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে-আমরা এ প্রত্যাশাই করি।

আবু আফজাল সালেহ : প্রাবন্ধিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *