গুরুত্বপূর্ণ সময়ে’ চীন সফরে পররাষ্ট্র সচিব

Slider বাংলার মুখোমুখি

চীন সফরে গেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গত শনিবার তিনি বেইজিংয়ে যান। ফিরবেন আগামীকাল বুধবার (১৯ এপ্রিল)। সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বাংলাদেশের স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা এবং চীনের বিআরআইর আওতায় প্রতিশ্রুত প্রকল্প এবং বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে এসে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ৪৮০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করে গেছে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা যাওয়ার পর প্রত্যাবাসন সেন্টার প্রস্তুতের নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। যদিও ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আস্থায় নেওয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের বলে মনে করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চায়, কোনো ছলচাতুরি করে নয়Ñ সম্পূর্ণ নাগরিক সুবিধা দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে হবে। স্বদেশে তাদের এমনভাবে ফেরাতে হবে, যেখানে থাকতে হবে অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা। আর পাইলট বা বিচ্ছিন্ন কোনো প্রত্যাবাসন নয়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে টেকসহ প্রত্যাবাসনের কথা বারবার বলা হচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিবের চীন সফরে বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র সচিবের চীন সফরের রাজনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। এমন এক সময় তিনি চীন সফরে গেলেন, যখন ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে একটি ‘আউটলুক’ (দৃষ্টিভঙ্গি) প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এতে এমন সব উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়েছে, যেগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের প্রতিফলন ঘটেছে। যেমন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি মুক্ত, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ অঞ্চলের প্রয়োজন বলে চূড়ান্ত খসড়ায় উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক খসড়াকে ‘নীতি’ বা ‘কৌশল’ না বলে এটিকে একটি ‘আউটলুক’ বা ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ বলার একটি নরম অর্থ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এমন ইঙ্গিত এখনো দেয়নি যে, দেশটি চার দেশীয় জোট কোয়াডে যোগ দেবে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর অনুযায়ী, ইন্দো-প্যাসিফিক যোগদানের মাধ্যমে চীনবলয় থেকে বের হয়ে যুক্তরাষ্টের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশেষ কোনো রাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে না বাংলাদেশ। কোনো বিশেষ রাষ্ট্রের দিকে ঝোঁকা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

অন্যদিকে চীন কেবল বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদারই নয়, চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানির গন্তব্য বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশের উদ্বেগ সত্ত্বেও বাংলাদেশকে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন দিয়েছে চীন। সমুদ্র উপকূলীয় কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় এ সংক্রান্ত ঘাঁটি নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে বেইজিং। মহেশখালীতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণে সহায়তা ছাড়াও কক্সবাজার এবং সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর দুটির উন্নয়নে কাজ পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য আর বিনিয়োগের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির শিল্পকে লক্ষ্য ধরে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন তাদের বাজারে এ দেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা আগেই দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের ইতবাচক সাড়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন। গত মার্চে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ঢাকাকে মার্কিন শিবিরে টেনে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। পররাষ্ট্র সচিবের সফরে ইস্যুটি আলোচনায় আসতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *