রমজানে ঘরে-বাইরে চলছে ইফতার আয়োজন। ইফতারে সামান্য ভাগ রাখা হয় গরিব-দুঃখীদের জন্য। অসহায় শিশু-কিশোররা বুট-মুড়ির ভাগ পেতে পলিথিন হাতে ছোটাছুটি করে। করুণকণ্ঠে অনুনয় করে সারি সারি বৃদ্ধ অসহায় মা-বোনেরাও। তাদের জীবনে কি স্বাদ-আহ্লাদ ফুরিয়ে গেছে? রোজামুখে কাঠফাটা রোদে দিনভর বাড়ি-বাড়ি ফেরি করে ওরা। তাদের কি ইচ্ছা জাগে না ফ্রিজের শরবতে কলিজা ঠা-া করতে! রাস্তার ধুলাবালি নয়, শান্তমনে ঘরে বসে ইফতার করতে? কিন্তু তাদেরও জীবনে প্রতিদিন রোজা! গ্রামীণচিত্র বেদনাময়! অনেক পরিবারের ইফতার-সাহরি চলে মোটা-পচা চালের ভাতেই। সামান্য তরকারির ব্যবস্থাও অনেকে করতে পারে না। সংযম-সহমর্মিতার মাস রমজান। দুঃখীজনের ব্যথা-বেদনা অনুভবেরও মাস রমজান।
সমাজের বিত্তবানরা যদি ইফতারে ভূরিভোজ না করে মিতব্যয়ী হতেন। অপচয় না করতেন; তা হলে অসহায়রা হয়তো আরও একটু ভালো থাকতে পারত। ইসলাম আমাদের শুনিয়েছে সংযম, সহমর্মিতা এবং মিত্যবয়ের কথা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী। অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ হয়ে দান করে, পরকালে তারা যথার্থ প্রতিদান পাবে। [সূরা হাদিদ-৭]
রাসূল (স) বলেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে, তবে রোজাদারের সওয়াবে সামান্যও কমানো হবে না। [তিরমিজি শরিফ : ৮০৭]
আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকাকে (রা. আনহা) জিজ্ঞেস করা হলো- রমজান এলে মহানবী (স) কী করতেন? হজরত আয়েশা (রা) বলেন, যখন রমজান মাস শুরু হতো, তিনি অসহায়দের সেবায় কোমরবেঁধে নেমে যেতেন, ঘরে-পরিবারের লোকদের দ্বীন সচেতন করতেন, রাতভর জেগে ইবাদত করতেন। [বোখারি শরিফ : ২৪১৭৭]
অসহায়দের ব্যাপারে নবীজি আরও বলেছেন- যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে, কেয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তায়ালা বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়। [মুসলিম : ৭০২৮]
নবীজি (স) আরও বলেছেন, হজরত আবু মুসা (রা. আনহু) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, অসুস্থ লোকের সেবা করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো। [বুখারি শরিফ : ৫৬৪৯; মুসনাদ আবি ই’আলা : ৭৩২৫]
যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিত্তবান, তাদের একান্ত করণীয়- ভোজনবিলাস নয়, সংযমের মাধ্যমে রোজা পালন করা। দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো, দয়া-মায়ার আঁচলে তাদের বেঁধে রাখা। দুঃখীদের প্রতি সমবেদনা নিজেদের জীবনে বয়ে আনবে প্রশান্তি, সজীব হয়ে উঠবে মন, প্রশস্ত হবে আয় রোজগারের পথ, মুছে যাবে সব পাপ। তিরমিজি শরিফে বর্ণিত- রাসূল (স) বলেন, দানশীলতা পাপ নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি নিভিয়ে দেয় আগুন।
মুদাররিস : শেখ জনূরুদ্দীন (রহ) দারুল কুরআন মাদরাসা
চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।