আগের রূপে আন্দোলনে ফিরতে চায় বিএনপি

Slider রাজনীতি


বিএনপি গত ১০ ডিসেম্বরের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যে গতি এনেছিল, তা ফিরিয়ে আনতে চায় দলটি। এ জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোট ও দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রমজানেও রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছেন তারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রমজান মাসেও তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছেন। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে তারা আন্দোলন চলমান রাখতে চান। সে জন্য তারা কর্মসূচি দিয়েছেন।

এদিকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের সাংগঠনিক ৮০ জেলায় দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি করবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাসকে।

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মানিকগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন গয়েশ^রচন্দ্র রায়, ঢাকা জেলায় ড. আবদুল মঈন খান। বাকি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরে ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চলতি রমজানে রাজপথের কর্মসূচি শুরু করল বিএনপি। আগামী ২০ রমজান পর্যন্ত নানা কর্মসূচি থাকবে। রমজান মাসের কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে¡ একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বৈঠক করছেন, ঘরোয়া প্রস্তুতি সভা করছেন কিংবা মতবিনিময় করছেন।

দলের একাধিক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশের আগে সাংগঠনিক ৯ বিভাগে গণসমাবেশ হয়। নানা বাধা পেরিয়ে সেসব সমাবেশ সফল হওয়ায় নেতাকর্মীদের মনোবল বেশ উঁচুতে ওঠে। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দলের মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ প্রায় সাড়ে ৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে ঢাকার গণসমাবেশ প্রত্যাশিত ফল পায়নি দলটি। সেই থেকে নেতাকর্মীদের মনোবল কমতে শুরু করে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে আন্দোলন ১০ ডিসেম্বরের আগের গতিতে নিতে চায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বিগত বছরগুলোয় শুধু ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তারা। কিন্তু এবার ইফতার আয়োজনের ব্যাপ্তি যেমন বহুগুণ বেড়েছে, তেমনি মাঠের কর্মসূচিতেও তাদের ব্যস্ত রাখা হয়েছে। ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যের পাশাপাশি রাজনীতি নিয়েই তাদের সময় পার করতে হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু বিএনপি নয়, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে বিভাগীয় পর্যায়ে এসব কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব ইফতার মাহফিলকে রাজনৈতিক মতবিনিময় সভায় পরিণত করে দেশের বিভিন্ন খাতে সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচারসহ অন্যান্য অসংগতি তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে রমজান মাসেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের কথাও থাকবে। সমাজের দরিদ্র আর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরা হবে এসব সভায়। এসব কর্মসূচিতে সব শ্রেণিপেশার উপস্থিতি বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছে হাইকমান্ড।

এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের কোন্দল মেটানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। যেসব জায়গায় কোন্দল নিরসন সম্ভব হবে না, সেসব কমিটি ভেঙে দেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে তৃণমূলে।

ইফতার কর্মসূচি

প্রথম রমজানে এতিম ও আলেমদের সম্মানে, চার রমজান পেশাজীবী এবং সাত রমজান বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান করে বিএনপি। ১১ রমজান ইফতার হবে রাজনীতিবিদদের সম্মানে। এর বাইরে দলের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ব্যানারে বিভাগীয় পর্যায়ে ৩২টি ইফতার মাহফিল থাকছে। পৃথকভাবে ঢাকা মহানগরে ৫০ সাংগঠনিক থানায় ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলেও। একইভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের লুটপাট, দুর্নীতি আর অন্যায়-অত্যাচারে জনগণ অতিষ্ঠ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ইফতার মাহফিল কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে।

রাজনৈতিক কর্মসূচি

আগামী ৮ এপ্রিল সব মহানগরের থানা এবং জেলার উপজেলা পর্যায়ে বিকাল ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রচারপত্র বিলি, মানববন্ধন অথবা অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে ১০ এপ্রিল। প্রথম দিন রাজশাহী ও সিলেট বিভাগ, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগ, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ, ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ, ১৬ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে এ কর্মসূচি হবে। ৮০ সাংগঠনিক জেলা, ৬ শতাধিক থানা-উপজেলায় অবস্থান, মানববন্ধন ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদল ৩৭টি ইফতার মাহফিলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে। থানা-উপজেলার কর্মসূচি সফলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৮ মার্চ থেকে সারা দেশে মতবিনিময় ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এ কর্মসূচি চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।

অন্যদের কর্মসূচি

রাজধানীসহ সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে আজ অবস্থান কর্মসূচি করবে সমমনা দল, জোট ও সংগঠন। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট আলাদাভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য পল্টন মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি করবে। এসব কর্মসূচি শুরু হবে বেলা ১১টায়। এ ছাড়া বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) পান্থপথে দলের কার্যালয়ের সামনে এবং বিকাল ৪টায় ‘গণফোরাম-পিপলস পার্টি’ আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে দুই ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি করবে।

গণসংহতি আন্দোলন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ সরকারের দমনপীড়নের প্রতিবাদে সমাবেশ করবে। গণঅধিকার পরিষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা গণমাধ্যমে স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, র‌্যাবের হেফাজতে নওগাঁয়ের সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে শনিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানিয়েছেন, আগামী সোমবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *