রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তি

Slider জাতীয়

maxresdefaultমো: আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন :

গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ নদের তীরে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় পর্বের ৫৩তম বিশ্বইজতেমার আখেরি মোনাজাত আগামীকাল রোববার। দ্বিতীয় পর্বের তিনদিনব্যাপী বিশ্বইজতেমার আজ শনিবার ছিল দ্বিতীয় দিন। সোনাবান বিবি’র শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বইজতেমা ময়দানে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত রোববার বেলা পৌনে ১১টা থেকে সোয়া ১১টার মধ্যে অনুষ্টিত হবার কথা রয়েছে।

এ মোনাজাতে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি অংশ গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচেছ। অার এই আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন ঢাকার কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের। সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতিত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে শেষ হবে চলতি বছরের ৫৩তম বিশ্বইজতেমার আসরের সমাপ্তি হবে।

বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব তথা চলতি বছরের বিশ্বইজতেমা।

শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় ধাপের তিন দিনব্যাপী ইজতেমা শুরু হয়। একইভাবে কাল রোববার দুপুরে সকল মানুষের সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতিত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।

বিশ্বইজতেমার প্রথম পর্ব গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর জর্দানের মাওলানা শায়েখ ওমর খতিবের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। তাবলিগ জামাত বরাবরের মতো এবারো টঙ্গীর তুরাগতীরে ইজতেমার আয়োজন করেন।

আগামীকাল আখেরি মোনাজাতে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে পুরো ইজতেমা ময়দান।প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশ নিয়েছে দেশের ১৬ জেলার মুসল্লিরা।

অাখেরী মোনাজাতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মো. জাহিদ হাসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, দলের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আলহাজ মো: জাহাঙ্গীর আলম, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি,টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্বা মো: ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক মো: রজব অালী সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচেছ। এছাড়া বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ইজতেমাি মাঠে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া কথা রয়েছে।

টঙ্গী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফিরোজ তালুকদার জানান, চলতি বছরের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে আসা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে দুই বিদেশী মুসল্লি সহ মোট ৬জনের মারা গেছে। । তারা হলেন- কাজী আজিজুল হক (৬০), আবদুল মামুন (৩৩),মো. শহীদুল্লাহ (৬৫),মহর আলী (৬০) ও বাকী দুই মুসল্লি বিদেশী নাগরিক। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে,অসুস্থ ও গাড়ির চাপায় তারা মারা গেছেন। ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।এছাড়া এক বিদেশী মুসল্লির লাশ ইজতেমা মাঠে দাফন করা হয়েছে।

টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া আরো এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মো. শহীদুল্লাহ (৬৫)।ঢাকার কোরাণীগঞ্জে তার বাসা। তিনি গতকাল শনিবার সকালে মারা যান।এরআগে শুক্রবার দিবাগত রাতে মহর আলী (৬০) নামে আরো এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে বলে জানা গেছে।এ নিয়ে বিশ্ব ইজতেমর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেয়া দুই বিদেশি নাগরিকসহ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ইজতেমা ময়দানের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১০টি টিম অভিযান পরিচালনা করছেন। ইজতেমাস্থলের আশপাশে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন দোকানে খাবারের মান ও মেয়াদ যাচাইয়ে এসব অভিযান পরিচালিত হয়। কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসব অভিযান পরিচালনা করেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে ৬জন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রাস্তাঘাট, ব্যস্ততম এলাকাসহ পুরো ইজতেমা ময়দান আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানকে ৮ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ ইজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। গত বারের চেয়ে এবার আরো ১৫শ পুলিশ বাড়ানো হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আজ পর্যন্ত ৪৫টি দেশের প্রায় ৪হাজার মুসল্লি যোগদান করেছেন। তিনি জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় জেলা প্রশাসনের ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ভেজালবিরোধী অভিযান এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আমেরিকা, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিপাইন, আফগানিস্তাান, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৯৯টি দেশের প্রায় ১৯হাজার বিদেশি মুসল্লি অংশ গ্রহন করেছিল।

এদিকে, তাবলীগের বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় থাকা আর ইজতেমার দাওয়াতের কাজে যারা ছিলেন সেসব মুসল্লিরাও দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসছেন। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাপনা আর ওযু, গোসলখানা ও নিরাপত্তাসহ সব ধরনের আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট তারা। এছাড়া লাখো লাখো দেশী বিদেশী মুসল্লিদের তুরাগ নদী পারাপারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ৭টি পন্টুন ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য র‌্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে ২য় ধাপেও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সিসি টিভি বসানো হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে নির্দিষ্ট ‘খিত্তা’ গুলোতে অবস্থান নিয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিরা। মুজাকারাসহ চলছে নানা ধর্মীয় বয়ান।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. জাহিদ আহসান রাসেল জানান, বর্তমান সরকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা মাঠে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এরমধ্যে ১৩টি উৎপাদক নলকূপের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩কোটি গ্যালন খাবার ও ওজু খোসলের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ৮ হাজারের বেশি মুসল্লি একই সময়ে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন বলেও তিনি জানান।

ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়, টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে নিউ মন্নু কটন মিলের ভেতরে ৫০টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে সকাল থেকে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বাংলা ভাষায় বয়ান চলছে। বয়ান করছেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহম্মদ হোসেন। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এরই মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।আগামীকাল রোববার অাখেরী মোনাজাতে শরিক হতে দ্বিতীয় পর্বে ১৪টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা টঙ্গী আসছেন। তারা নিজ নিজ জেলা ওয়ারী ও খিত্তায় গিয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
আসছেন মুসল্লিরা। অাখেরী মোনাজাতের আগমুহুর্ত্ব পর্যন্ত এ দেশী বিদেশী মুসল্লিদের ঢল অব্যাহত থাকবে।

গত দু’দিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাবলিগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বাদ ফজর বাংলাদেশের মাওলানা মোহম্মদ হোসেনের বয়ানের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়। বাদ জোহর সোমালিয়ার মাওলানা শেখ ইসমাইল, বাদ আসর বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক এবং বাদ মাগরিব বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জোবায়ের বয়ান করবেন।

ইজতেমা প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি খিত্তায় তাশকিলের জন্য বিশেষ স্থান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে ইচ্ছুকরা নাম তালিকাভুক্ত করে সেখানে অবস্থান করছেন। কাকরাইলের মসজিদের মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের মেহনতে পাঠানো হবে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৮৩টি দেশের ৩ হাজার ৯৭৮জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্র গতকাল শনিবার জানিয়েছে।

টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত কাল রোববার। সে কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে ২ মিনিট করে যাত্রাবিরতী করবে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এন্ড কলেজ মাঠ, উত্তরার আজমপুর স্কুল মাঠ, কামারপাড়ায় রানাভোলা মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা আয়োজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান ময়দানে স্থানান্তর করা হয় বিশ্ব ইজতেমা। ২০১১ সাল থেকে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। স্থান সংকুলান না হওয়া, অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন অসুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এ আয়োজন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *