নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন পেয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। এদিকে, জেসমিনের নামে যে যুগ্ম সচিব মামলা করেছেন, প্রতারণার মামলা ছিল তার বিরুদ্ধেও।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে বসেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। এনামুল হকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার নামে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চাঁদপুরের হাইমচর থানার গাজীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন ও নওগাঁর চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার মামলা করেন তিনি। রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করা হয়।
আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে এনামুল হক জানান, তার নিজের নামে ফেসবুক আইডি থেকে নানা প্রলোভনে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় ছন্দা জোয়ার্দার নামে এক নারী মামলা করেন গত বছরের অক্টোবরে। এই মামলার আসামি তিনি (এনামুল হক) ও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া রোমানা ফেরদৌস নামে এক নারী। প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ছন্দার কাছ থেকে এ টাকা নেওয়া হয়।
ওই মামলায় তিনি ঢাকার আদালতে হাজিরা দেন। বর্তমানে জামিনে আছেন। তবে এনামুল হক দাবি করছেন, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে প্রতারকচক্র এক কাজ করেছিল। স্ত্রী পরিচয় দেওয়া ওই নারীকে তিনি চেনেন না। ওই সময় ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল বলেও দাবি তার।
এনামুল হকের বক্তব্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরুতে তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। এ ব্যাপারে গত বছরের মার্চে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। যদিও গত ২৩ মার্চ রাজপাড়া থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে তার ছবি দিয়ে নতুন আইডি খোলার কথা বলেছেন তিনি। এনামুল হক জানিয়েছেন, এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্যবহার করছিলেন।
ফেসবুকে হ্যাকার তার (এনামুলের) পরিচয়েই বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে সুলতানা জেসমিনের সঙ্গে ওই আইডি থেকেই বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন হ্যাকার। সে স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় পরিচালক (এনামুল হক) পরিচয় দিয়ে জেসমিনের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত’ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জেসমিনও স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় পরিচালক এনামুল হক ভেবে সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন।
একপর্যায়ে হ্যাকার জেসমিনের কাছ থেকে তার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর নেন। বিভিন্ন সময়ে হ্যাকার নিজেকে স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় পরিচালক এনামুল হক পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে মানুষের কাছে বিভিন্ন সময়ে ১৯ লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি লোকজনের কাছ থেকে টাকাগুলো জেসমিনের ব্যাংক একাউন্টে জমা নিতেন। পরে জেসমিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকারের কাছে পাঠাতেন।
যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, জেসমিনও আগে জানতেন না যে তার কথা হয় হ্যাকারের সঙ্গে। এনামুল ভেবে লেনদেন করেছেন জেসমিন। একপর্যায়ে হ্যাকার নিজেই জেসমিনকে জানিয়ে দেন, তিনি আসলে এনামুল হক নন, একজন হ্যাকার। তার নাম আল আমিন। কিন্তু তখন আর জেসমিনের এই প্রতারকের কাছ থেকে দূরে সরে আসার কোনো পথ ছিল না। কারণ ব্যক্তিগত সম্পর্কের নানা চ্যাটিং করেছিল জেসমিন।
এনামুল হক জানান, জেসমিনের ব্যাংক হিসাব পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এতে ১৯ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এই টাকা গেছে আল আমিনের কাছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় মামলার পর কয়েকদিন আগে একই ধরনের অভিযোগ ওঠে যুগ্ম সচিব এনামুল হকে বিরুদ্ধে। এনামুল হকের ফেসবুক আইডি থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আসে তার কানেও। এরপরই এনামুল হক থানায় মামলা করেন।