রোজার মৌলিক অনুষঙ্গ ইফতার-সাহরি। রমজান মাসে মুসলিমরা সারাদিন রোজা রাখার পর, সূর্যাস্তের সময় যে খাবার গ্রহণ করেন তার নাম ইফতারি। খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা সুন্নত।
সেহরি বা সেহেরি বা সাহরি আরবি সুহুর শব্দ থেকে নেওয়া। অর্থÑ ঊষার পূর্বের খাবার। রমজানে অথবা বছরের যে কোনো দিন রোজা পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তার নাম সাহরি।
বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ তিরমিজি শরিফে বর্ণিত- রোজার মাসে রাসুল (স) মাগরিবের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুরের মাধ্যমে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুর। এর ব্যতিক্রম হলে কয়েক ঢোক পানিই ছিল রাসল (স)-এর ইফতার।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবি আউফা (র) সূত্রে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, রোজায় আমরা রাসুল (স)-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বললেন, ছাতু ও পানি মিশিয়ে ইফতার পরিবেশন কর। (মুসলিমÑ ১০৯৯)।
বিশ্বনবি মুহাম্মদ (স) ইফতারে কত সাদাসিধে ছিলেন। খেজুর ছাতু আর পানির ইফতার। সাদাসিধে এই ইফতারে রয়েছে তৃপ্তি। আছে অপরকে ইফতার করানোর সওয়াব। চলমান বৈশ^য়িক এই মহামারীর সময়ে নিজ ঘরে শুধু ইফতারের মহোৎসব নয়, পাড়া-প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজন কিংবা অসহায়দের খোঁজ-খবর রাখা উচিত।
নিজের ইফতার-সাহরির আয়োজন ছোট করে হলেও অভাবীর জন্য ভাবা প্রয়োজন।
ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হজরত রাসুল (স) বলেন, কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, আল্লাহতায়ালা তার গুনাহ মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। ইফতার প্রদানকারী একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর সওয়াব সামান্য কমানো হবে না। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (স) আমাদের এমন সামর্থ্য নেই যা দিয়ে কাউকে ইফতার করাতে পারি। তিনি বলেন, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তিসহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার হাউসে কাওসার থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না। বায়হাকি, মেশকাত : ১৭৪
হজরত সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি (রা) সূত্রে বর্ণিত, মহানবী (স) বলেন, তোমরা খুরমা-খেজুর দিয়ে ইফতার করবে। তবে যদি সে খুরমা-খেজুর না পাও, তা হলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কারণ পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয়ে যায় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, দুই. ন্যায়বিচারক বাদশাহের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। (আহমদ)
রাসুল (স)-এর সেহরির কথা হজরত আব্দুল্লা বিন হারেস এভাবে বলেনÑ এক রাতে রাসুল (স) সেহরি খাচ্ছিলেন, আমি তখন হুজুর (স)-এর নিকট পৌঁছলাম। তোমরাও সাহরি খাও। এতে আল্লাহ বিশেষ বরকত রেখেছেন। সেহরি পরিত্যাগ কর না। (নাসায়ি : ২১৬২)। রাসুল (স) সাহরিতে কী খেতেন? হযরত আনাস বলেনÑ সাহরির সময় রাসুল (স) বললেনÑ আমি রোজা রাখব, খাবার দাও। আমি রাসুল (স)-এর সামনে খেজুর ও পানি পরিবেশন করলাম। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবু হুরাইয়া বলেন, মুমিনের উত্তম সেহরি শুকনো খেজুর। (আবু দাউদ- ২৩৪৫)।
বুখারি শরিফের হাদিসে আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত আছে নবী বলেছেন তোমরা সাহরি গ্রহণ কর কেননা তা বরকতপূর্ণ খাবার।
রাসুল (স) বলেন, পানি মিশ্রিত এক চুমক দুধ বা শুকনা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানির মাধ্যমে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবে। এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দেবে। আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়াবে আল্লাহ তাকে হাউসে কাউসার হতে এমন পানীয় খাওয়াবেন সে জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত তৃষ্ণিত হবে না।
রোজায় ইফতার-সাহরির মাধ্যমে মানব জাতিকে পরোপকারে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। উৎসাহিত করা হয়েছে নিঃস্বদের দানে। প্রকৃত রোজাদার নিজে ইফতার করবে, অন্যকেও করাবে। অসহায় দুঃখীদের মুখে হাসি ফোটাবে।
মুদাররিস : শেখ জনূরুদ্দীন (রহ) দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা