রমজানের পণ্যে আগুন

Slider জাতীয়

80238_g

ধনেপাতা ৩০০, বেগুন ১০০, কাঁচামরিচ ৬০, শসা ৫০ টাকা

রমজানের শুরুতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম চড়া। বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। গত ১৫ দিনে শবেবরাত ও বাজেটকে ঘিরে দুই দফায় দাম বাড়ে। সর্বশেষ রমজানের আগের দিন বাজার ছিল অস্থির। গতকাল এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশী পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২৫ টাকায়। যা শবেবরাতের আগে ছিল ১৭৫ টাকা। ১৫ দিনের ব্যবধানে পাল্লায় বেড়েছে ৫০ টাকা। ভারতীয় পিয়াজের দাম আরও বাড়তি। রমজানের আগের দিন প্রতি পাল্লা ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২৫ টাকা। যা শবেবরাতের আগে ছিল ১৫০ টাকা। সে হিসেবে ভারতীয় পিয়াজের দাম পাল্লায় বেড়েছে ৭৫ টাকা। এ কয়দিনে দেশীয় পিয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা ও ভারতীয় পিয়াজের দাম ১৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন গতকাল বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। যা শবেবরাতে আগে ছিল মাত্র ২০ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। ১০ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ৬০ টাকার ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। ১০ টাকার লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। বাজার ঘুরে দেখা গেছে আরও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে রমজানকে ঘিরে। ৫৫ টাকার ছোলা ৬০ ও ৪০ টাকার কেজির মটর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য মজুদ থাকলেও এ মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় কম। এ ছাড়া দুই দফায় দাম বেড়েছে। কেউ বলছেন, একটি চক্র সিন্ডিকেট করে রমজানে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট সেক্রেটারি লোকমান হোসেন বলেন, আমদানি পর্যাপ্ত। পণ্যের সংকট নেই। তবে রমজানের শুরুতে বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করার কারণে দাম বেড়েছে বলে তার ধারণা। তবে বাজারের উত্তাপ সর্বোচ্চ ৫ রমজান পর্যন্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন পাইকারি বাজারের এই ব্যবসায়ী নেতা।

শবেবরাতের পর ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ছোলার দাম ৩০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৯০০ টাকা, ছোলা ডালের বস্তায় ৬০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৪০০ টাকা, খেসারি ডালের বস্তায় ৪০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৪০০ টাকা এবং দেশী মসুর ডালের বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫০০০ টাকা। শরবত তৈরির প্রধান উপকরণ চিনির দাম আকাশছোঁয়া। বস্তায় বেড়েছে ২০০ টাকা। কয়েক দিন আগেও ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা চিনির দাম ছিল ১৭০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০০ টাকায়। বেড়েছে রসুনের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা বোরহান উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে শবেবরাতের আগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। গরু ও মুরগির মাংসের দাম বাড়তে বাড়তে রমজানের আগেই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ইতিমধ্যে প্রতি কেজি গরু মাংসের দাম ৪০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।  ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, মাংসের  দাম আরও বাড়তে পারে। সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) বেশ কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে। টিসিবির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল দেশী পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। একইভাবে প্রতি কেজি আমদানি পিয়াজ ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ছোলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। আমদানি রসুন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা পর্যন্ত। তবে টিসিবির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায়।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কৃষিজাত পণ্যের দাম বাড়তি। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী রমজানের চাহিদাকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা অতি মুনাফা করছে বলে পণ্যের দাম বাড়ছে। পবিত্র রমজানে তাদের এই অতি মুনাফার মনোভাব অনৈতিক আখ্যা দিয়েছেন দুদকের সাবেক এই চেয়ারম্যান। সরকারের কোন করণীয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে সরকারের কিছু করার নেই। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা রয়েছে। সরকার হস্তক্ষেপ করলে দাম আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *