আইনি মারপ্যাঁচে আটকে গেছে খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও নির্বাচন

Slider রাজনীতি


বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান অবস্থায় রাজনীতি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সম্প্রতি সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের আইনমন্ত্রীও। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হচ্ছে রাজনীতিতে। খালেদা জিয়া বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে থাকলেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন।

এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্য কী আছে?

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বক্তব্য দিয়েছেন।

বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ কতটা আছে, সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর ফলে এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করেছে বলেই অনেকে মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথম বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনার ‘উদারতার’ জন্য খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে আছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) তো দণ্ডিত। তিনি কি মুক্তি পেয়েছেন? যেটুকু পেয়েছেন, সেটুকু মানবিক কারণে ও শেখ হাসিনার উদারতার জন্য পেয়েছেন। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কোথায়? কারাগারে। ঠিক আছে? তাহলে রাজনীতির সুযোগ কোথায়? দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়?’

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি কারাগারে থাকলে তার প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। কিন্তু খালেদা জিয়া তো এখন কারাগারের বাইরে আছেন।

একই বিষয়ে আরেক বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মুক্তির শর্ত মেনে তাকে রাজনীতি করতে হবে।

মুক্তির শর্ত
বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করা হয়। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে দু’টি শর্ত দেয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করার সময় রাজনীতি করতে পারবেন না এমন কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি বলে স্পষ্ট করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘শর্তগুলী কী? সেটা তখনো ছিল। এখনো আছে। (ক)- তিনি ঢাকায় নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। (খ)- উক্ত সময়ে তিনি বিদেশ গমন করতে পারবেন না।’

রাজনীতি করার সুযোগ নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইনি দিক থেকে যদি বলেন, তাহলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আপনাদেরকে দেখতে হবে। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, তিনি তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করার আবেদন করেছিলেন। কারণ, তিনি অসুস্থ। এটাকে মনে রাখতে হবে।’

আইনের ব্যাখ্যা
নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করার সময় দেয়া শর্ত ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বিবিসিকে বলেন, সরকার যেকোনো সময় শর্তযুক্ত বা বিনা শর্তে সাজা স্থগিত করতে পারে।

মালিক বলেন, ‘সাজা তো সাসপেন্ড করে রেখেছে। তাকে যদি ঘরবাড়ি থেকে বের হবার অনুমতি দেয়, তাহলে বের হয়ে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বর্তমানে যে শর্ত দেয়া আছে ওই শর্ত অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে আমি কোনো আইনগত বাধা দেখছি না।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছর কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশেষ কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে তার দণ্ড স্থগিত করে সরকার।

কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবেন কি না এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ধারা ‘ঘ’তে বলা হয়েছে ‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অনূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন।

সংবিধানের ধারা ও গণপ্রতিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী বর্তমান অবস্থায় দলের চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারলেও সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘দু’বছরের বেশি দণ্ডিত হলে কারাবাসের সময়টা পার হওয়ার পরের পাঁচ বছর প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থীদের যোগ্যতা অযোগ্যতার তালিকায় সংবিধানেও বলা আছে। রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্যা পিপলস অর্ডারেও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) বলা আছে।

‘এটা হুসেইন মোহাম্মাদ এরশাদের বেলায়ও হয়েছিল। ওনার সাড়ে তিন বছরের মতো জেল হয়েছিল। বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০১-এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। কারণ পাঁচ বছর পেরোয়নি। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনে তো তিনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।’

দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দু’বছরের কিছু বেশি সময় কারাভোগ করেছেন। সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ এ পর্যন্ত ছয়দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ২৪ মার্চ তার দণ্ড স্থগিতের চলতি মেয়াদ শেষ হবে।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *