ইংল্যান্ডের কাছে লজ্জার পরাজয়ে সিরিজও হারল বাংলাদেশ

Slider খেলা


ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে লড়াই করে এক ডেভিড মালানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারল না তামিম ইকবালের দল। ফলে ইংলিশদের বিপক্ষে ১৩২ রানের পরাজয়ের এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হারল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথমে ৩২৬ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে বিশাল সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তাসের মতো ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস। যার ফলে মাত্র ১৯৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা।

শুক্রবার (৩ মার্চ) মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। দলীয় ২৫ রানের মাথায় ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্টের উইকেট তুলে নেন পেসার তাসকিন আহমেদ। নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৭ রানে করে আউট হন তিনি।

এরপর ওয়ান ডাউনে নামা ডেভিড মালানকে নিয়ে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান আরেক ওপেনার রয়। মালান কিছুটা ধীরগতিতে ব্যাটিং করলেও সাবলীল ব্যাটিংয়ে একের পর এক বাউন্ডারি মেরেই যাচ্ছিলেন রয়। তবে তাদের ৫৮ রানের জুটি ভেঙে দেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।

ইনিংসের ১৬তম ওভারে দলীয় ৮৩ রানে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মালান রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ফুল লেংথে পিচ করা মিরাজের বল শার্প টার্ন নিয়ে সোজা আঘাত হানে মালানের প্যাডে। আবেদনে সাড়া দিয়ে আউটের আঙুল তোলেন আম্পায়ার। মালানও রিভিউ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। ১৯ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই ১১ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

এরপর দলীয় ৯৬ রানে জেমস ভিন্সকে সাজঘরের পথ দেখান তাইজুল ইসলাম। টাইগার উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে পরিনত হয়ে ৫ রান করেন ভিন্স। তবে অধিনায়ক বাটলারকে নিয়ে ১০৯ রানের জুটি গড়ে ইনিংসকে দুই শ রান ছাড়িয়ে নিয়ে যান রয়। ফিজের ৩১তম ওভারে লেগ সাইডে ফ্লিক করে ১০৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার।

এই হার্ডহিটার ব্যাটার সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় ২০৫ রানে থামে ১২৪ বলে ১৮টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কার মারে রয়ের ১৩২ রানের ইনিংস। তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। পরের ওভারে উইল জ্যাকসকে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন তাসকিন। বিদায়ের আগে এই অলরাউন্ডার ৪ বলে ১ রান করেন।

জ্যাকসের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে আসেন মঈন আলী। কাপ্তান বাটলারকে নিয়ে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৫২ রানের জুটি গড়েন তিনি। যদিও বেশি আগ্রাসী ছিলেন বাটলারই। তবে ৬৪ বলে ৭৬ রান করা বাটলারকে নিজের বলেই দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন মিরাজ।

শেষ দিকে মঈনের ৩৫ বলে ৪২ রান, স্যাম কারানের ৩৩ রান ও আদিল রশিদের ৬ রানে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩২৬ রান সংগ্রহ করে সাদা বলের দুই ফরম্যাটের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষে পেসার তাসকিন আহমেদ একাই নেন ৩টি উইকেট। এ ছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ ২টি এবং সাকিব ও তাইজুল একটি করে উইকেট শিকার করেন।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইংলিশ পেসার স্যাম কারানের ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনেই ফেরেন শূন্য হাতে।

বাঁহাতি এই পেসারের বলে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন। এরপর আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো শান্ত প্রথম বলেই খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পিছনে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।

প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ যখন বিশাল চাপের মধ্যে, ঠিক তখনই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও সাজঘরে ফিরে আসেন। শান্তর মতো তিনিও উইকেটরক্ষক বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে স্যাম কারানকে তৃতীয় উইকেট উপহার দেন। বিদায়ের আগে ৫ বলে ৪ রান করেন তিনি।

রান তাড়ায় ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া টাইগারদের ইনিংসে হাল ধরেন কাপ্তান তামিম ইকবাল ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাদের জুটি বাংলাদেশকে আশাও দেখাচ্ছিল। তবে তাদের ৭৯ রানের জুটি ভেঙে যায় কাপ্তান তামিমের বিদায়ে।

মঈন আলীর বলে বাউন্ডারি লাইনে জেমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ড্যাশিং এই ওপেনার। বিদায়ের আগে ধীর গতিতে ৬৫ বলে ৩৫ রান করেন তিনি।

তামিমের বিদায়ের পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। তবে তিনিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। আদিল রশিদের বলে স্যাম কারানের ক্যাচে ৫৮ রান করেন টাইগার পোষ্টারবয়।

এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৩২, আফিফ হোসেনের ২৩ ও তাসকিন আহমেদের ২১ রানে পরাজয়ের ব্যবধানই শুরু কমিয়েছে স্বাগতিকরা। ফলে ৪৪.৪ ওভারে মাত্র ১৯৪ রানেই গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে স্যাম কারান ও আদিল রশিদ উভয়ই ৪টি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া একটি উইকেট পান মঈন আলী।

অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকানো ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন। সিরিজের তৃতীয় শেষ ওয়ানডে ম্যাচ আগামী ৯ মার্চ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *