দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পরবর্তী মহাসচিব নিয়োগ আফগানিস্তান থেকে হওয়ার কথা ছিল। তবে দেশটির তালেবান শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় তা আটকে গেছে। ফলে আগামী তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ থেকে সংস্থাটির পরবর্তী মহাসচিব নিয়োগ দিতে সম্মত হয়েছে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র।
জানা গেছে, ইংরেজি নামের বর্ণনাক্রম অনুযায়ী সার্কের মহাসচিব মনোনয়নের সুযোগ পায় সার্কের সদস্য দেশগুলো। সে হিসাবে এবার এই পদে আফগানিস্তানের মনোনয়ন দেওয়ার কথা। তবে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এখন পর্যন্ত কোনো দেশের স্বীকৃতি পায়নি তালেবান। সে কারণে দেশটি থেকে নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া হলে জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে। সার্কের বর্তমান চেয়ার নেপাল অন্য সদস্য দেশগুলোকে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয় এবং তারা বিষয়টি মেনে নেয়।
২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে সর্বশেষ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল। ২০১৬ সালে পাকিস্তানে এই আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই সময় বাংলাদেশ, ভারতসহ চার দেশ স্বতন্ত্র কারণ দেখিয়ে তা বর্জন করে। এর পরই জোটে অচলাবস্থা তৈরি হয়। উল্লেখ্য, সার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুজন বাংলাদেশি কূটনীতিক জোটটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আবুল আহসান। ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মহাসচিব ছিলেন বাংলাদেশি কূটনীতিক কিউএএমকে রহিম।
সূত্র জানায়, নতুন মহাসচিব মনোনয়নে ঢাকাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী মহাসচিব নিয়োগের আগ পর্যন্ত বর্তমান মহাসচিব ও শ্রীলংকার সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ইসালা রুয়ান ভিরাকুনকে স্বপদে বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছে নেপাল। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
সূত্র আরও জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার পর সার্ক মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতার পাশাপাশি দল এবং সরকারের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি বিবেচ্য হবে। তবে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সার্কের বর্তমান স্থবিরতা উত্তরণে পরবর্তী মহাসচিবের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কারণ সার্ক বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় তা বাংলাদেশের সর্বশেষ মহাসচিবের আমলে সই হওয়া সাফটার আওতাতেই হচ্ছে। এর আগে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতায় ১৯৯৮ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শীর্ষ সম্মেলন (সামিট) হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক এবং সম্মিলিত সহযোগিতায় গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকা সার্ককে আবারও স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সার্কের মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ায় আবারও সার্কের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে ফিরে যাবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সংক্ষেপে সার্ক) দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এর সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তান। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, মিয়ানমার, মরিশাস ও অস্ট্রেলিয়া হলো সার্কের ৮টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জোটটির। দুই বছর পর ১৯৮৭ সালে সার্কের সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।