কঠোর নিরাপত্তায় ত্রিপুরায় চলছে বিধানসভার নির্বাচন

Slider সারাবিশ্ব


ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য ত্রিপুরায় আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ত্রয়োদশ বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৭টা থেকে রাজ্যটির ৬০টি বিধানসভার আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আর ভোট গণনা করা হবে আগামী ২ মার্চ। এই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২৮ লাখের কিছু বেশি। মোট ২৫৯ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তাদের মধ্যে ২২ জন নারী প্রার্থী। মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ৩ হাজার ৩৩৭টি, এরমধ্যে স্পর্শকাতর এক হাজার ১২৮টি আসন।

আসন্ন নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে এই রাজ্যটিতে। একদিকে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তাদের শরিক দল ইন্ডিজিনাস পিপল ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি) অন্যদিকে রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট ও তৃণমূল কংগ্রেস। কিছুটা লড়াই দিতে পারে টিপ্রা মোথা পার্টি। রাজ্যটির ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ৫৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, বাকি ৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে তাদের শরিক দল আইপিএফটি। সিপিআইএম ৪৩ আসনে, টিপ্রা মোথা ৪২ আসনে, কংগ্রেস ১৩ আসনে, তৃণমূল কংগ্রেস ২৮ আসনে ও সিপিআই, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি করে আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ৫৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীরা।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়। প্রতিটি দলই ভোটারদের টানতে নিজেদের মতো করে নির্বাচনী প্রচারণা সেরেছে। বিজেপির হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীসহ দলের শীর্ষ নেতারা।

তৃণমূলের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। সিপিআইমের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, মোহাম্মদ সেলিমের মতো শীর্ষ নেতারা। তবে কংগ্রেসের হয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী, দীপা দাস মুন্সিরা প্রচারণায় অংশ নিলেও দলের সাংসদ রাহুল গান্ধী বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে দলের হয়ে এই প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।

মূলত রাজ্যের উন্নয়ন, উন্নত অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা, নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, পুরোনো পেনশন প্রকল্পের বদল ঘটানোসহ একাধিক ইস্যুকেই এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় হাতিয়ার করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, বিরোধী সিপিআইএম, কংগ্রেস বা তৃণমূল কেউই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়ছে না।

সম্প্রতি গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিক করেই নির্বাচনে লড়তে দেখা গিয়েছিল বিজেপিকে। সেক্ষেত্রে ত্রিপুরায় ভিন্ন চিত্র। নির্বাচনের এক বছর আগেই বিপ্লব দেবকে সরিয়ে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল ডা. মানিক সাহাকে। এই নির্বাচনে মানিক সাহার পাশাপাশি উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ও রাজ্যটির বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কিন্তু কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হয়নি।

প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম নেতা তথা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই নির্বাচনে লড়ছেন না। সাব্রুম থেকে লড়ছেন ত্রিপুরার সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। কিন্তু দলের তরফে জানানো হয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী মুখ’ নয়, বিজেপিকে উৎখাত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

কংগ্রেস মাত্র ১৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, ফলে তারাও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাউকে তুলে ধরেনি। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছে রাজ্য সভাপতি বিরাজিৎ সিনহা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। অন্যদিকে টিপ্রা মোথার প্রধান প্রদ্যোৎ বিক্রম দেববর্মা জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য ‘বৃহত্তর টিপ্রাল্যান্ড’ গঠন। শেষবার ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরকারে আসে বিজেপি। সেবার তারা ৩৬টি আসনে (৪৩.৫৯ শতাংশ ভোট) জয় পায়, তাদের জোট শরিকদল আইপিএফটি জয় পায় ৮টি আসনে। ১৬টি আসনে জয় পায় সিপিআইএম (৪২.২২ শতাংশ ভোট)।

এদিকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা গিত্যে কিরণকুমার দিনকররাও। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের অশান্তি রুখতে সর্বত্র নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৪০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের ১১ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। সিল করে দেয়া হয়েছে ত্রিপুরার সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলোর সীমান্ত এবং ত্রিপুরা-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত।

ইতোমধ্যেই মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকেই রাজ্যজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং ভোটের পরদিন অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। ভোটের দিন ভোটাররা কোথাও ভোট দিতে যাওয়ার সময় বাধার সম্মুখীন হলে নির্বাচন কমিশন তাদের নিরাপদে ভোটদানের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে। চলতি বছরের ২২ মার্চ ত্রিপুরা বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে তার আগেই এই রাজ্যে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে হবে।

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি একই দিনে ভোট নেয়া হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও দুই রাজ্য মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে। ত্রিপুরার সঙ্গেই এই তিন রাজ্যে ভোট গণনা আগামী ২ মার্চ। চলতি বছরে ভারতজুড়ে আরও মোট ছয় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হলো কর্ণাটক, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা। আগামী বছর ২০২৪ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনগুলোতে যে দল ভালো ফল করবে তারাই দেশটির সাধারণ নির্বাচনেও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *