রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আলোচনার শীর্ষে মসিউর রহমান

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন- এই প্রশ্ন এখন অনেকের। কিছু দিন ধরে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুই-তিনজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে সবশেষ আলোচনার শীর্ষে আছেন ড. মসিউর রহমান। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামীকাল মঙ্গলবার সংসদীয় দলের বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ দিনই জানা যেতে পারে আবদুল হামিদের উত্তরসূরি কে হবেন- ড. মসিউর রহমান, নাকি অন্য কেউ।

প্রার্থী একাধিক হলে সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে ২৩ এপ্রিল। তিনি পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।

সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একবারই সংসদের কক্ষে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না। তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক লাগে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। আওয়ামী লীগের আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬। বিএনপির সাতজন পদত্যাগ করায় তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। এ ছাড়া গণফোরামের দুটি এবং স্বতন্ত্র তিনটি আসন আছে সংসদে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্রদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়ার সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়েছে।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী দিয়ে কী লাভ? সংসদে আমাদের ভোট আছে দুটি। এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই।’

সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার আলোচনার শীর্ষে আছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও সম্প্রতি তাকে খুব বেশি জনসম্মুখে দেখা যায়নি।

গত সপ্তাহে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেছে।

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ ইস্যুতে ড. মসিউর রহমানের নামও তুলেছিল বিশ^ ব্যাংক। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার জন্য বিশ্বব্যাংকের কড়া সমালোচনা করেন ড. মসিউর রহমান।

এক দশক আগে দুর্নীতির তদন্তের সময় বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত মেনে এক মাসের ছুটিতে গিয়েছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের তৎকালীন ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর ড. মসিউর রহমান। পরবর্তী সময় কানাডার আদালতে দুর্নীতির সেই অভিযোগ খারিজ হয়। তার সেই সততার বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও আলোচনায় আছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত শিরীন ২০১৩ সালের এপ্রিলে সবচেয়ে কম বয়সে জাতীয় সংসদের স্পিকারের আসনে বসেন।

আলোচনায় নাম আসে আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরেরও। অবশ্য গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে যেতে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো আগ্রহ নেই। এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে প্রস্তাবও দেননি।’

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলীর নামও আলোচনায় রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে প্রধামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা নিয়ে অন্য কারও মন্তব্য করার সুযোগ নেই।

আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভা কক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হবে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতেই সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।’

আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রার্থীর সংখ্যা একজনের বেশি না হলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে বিধিমালা অনুযায়ী ভোট হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি এ নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্তা’। তার কার্যালয়েই (প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে) নির্ধারিত দিনে অফিস চলাকালে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *