আজ ১০ নভেম্বর ২০১৭। ১০ নভেম্বর ১৯৮৭ সালের এই দিনে—ঠিক ৩০ বছর আগে—ঢাকার বনগ্রামের সাহসী যুবক নূর হোসেন বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ আর ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে হাজার হাজার মানুষের মিছিলের রাস্তায় নেমেছিলেন। বাংলাদেশ সচিবালয়ের পূর্ব পাশের রাস্তায় পুলিশের লক্ষ্যভেদী গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন রাজপথে। শহীদ হয়েছিলেন নূর হোসেন।
কবি শামসুর রাহমান তাঁকে নিয়ে লিখেছিলেন কবিতা, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’। কবিতাটি প্রথম ছাপা হয়েছিল সাপ্তাহিক একতায়, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সংখ্যায়।
উদোম শরীরে নেমে আসে রাজপথে, বুকে পিঠে
রৌদ্রের অক্ষরে লেখা অনন্য স্লোগান,
বীরের মুদ্রায় হাঁটে মিছিলের পুরোভাগে এবং হঠাৎ
শহরে টহলদার ঝাঁক ঝাঁক বন্দুকের সিসা
নূর হোসেনের বুক নয় বাংলাদেশের হৃদয়
ফুটো করে দেয়; বাংলাদেশ
বনপোড়া হরিণীর মতো আর্তনাদ করে, তার
বুক থেকে অবিরল রক্ত ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে।
নূর হোসেনের আত্মত্যাগ কি ফসল দিয়েছে আমাদের? নূর হোসেন যার হাত থেকে দেশ বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সে এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। নূর হোসেন কি জানতেন যে, যার গুলিতে তিনি শহীদ হয়েছেন তিনিই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আবার আসবেন? এটাই আমাদের গনতন্ত্রের নমুনা। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন আমরা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করলাম? আন্দোলন করে শহীদের সংখ্যা বাড়ালাম। কি দরকার ছিল এই তরুন ছেলেদের রক্তে রাজপথ লাল করার। এটাই আমাদের ভুল। কঠিন ভুল। তাই গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে জ্ঞান থাকলে আর নূর হোসেন না রাজপথে যাবেন না। যদি প্রাতিষ্ঠানিক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার লক্ষ্যন দেখা দেয় তখনি কেবল রাজপথে যাওয়া যায়। না হয় ঘরে থাকাই উত্তম।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামাবংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম