পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। ৭৯ বছর বয়সে আজ রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের সেনাপ্রধান থেকে হয়ে যান প্রতাপশালী সেনাশাসক। এই প্রভাবশালী ব্যক্তির জীবন কেমন ছিল? নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে তা তুলে ধরেছেন। সেখানেই তিনি নিজের প্রেমের বিষয়টি প্রকাশ করেন। জানান, বাংলাদেশের এক তরুণীর সঙ্গে প্রেম করেছিলেন তিনি। পরে সেই প্রেমের ইতি টানতে হয়েছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, পারভেজ মোশাররফের আত্মজীবনীমূলক বই ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার: আ মেমোয়ার’ প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। সেখানে জীবনের নানা কথা তুলে ধরেন। নিজের প্রেমের কথা প্রকাশ করে তিনি জানান, তার দ্বিতীয় প্রেমিকা ছিলেন এক বাঙালি তরুণী। তিনি বাংলাদেশে অন্যের সংসার করেন।
পারভেজ মোশাররফ আত্মজীবনীতে লেখেন, ‘ও (প্রেমিকা) এখন সুখী দাম্পত্য কাটাচ্ছে। থাকে বাংলাদেশে।’ কিন্তু সেই প্রেমিকার নাম কখনও জনসমক্ষে আনেননি।
পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জানান, বাঙালি তরুণীর সঙ্গে প্রেমের আগে অন্য একটি সম্পর্কে ছিলেন। সেটা কিশোর বয়সে। ভালোবাসা বুঝতে না বুঝতেই ‘প্রথম প্রেমিকা’ তার জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
প্রেমের শুরুর গল্প জানাতে গিয়ে পারভেজ মোশাররফ উল্লেখ করেন, ওই বাঙালি প্রেমিকা তার প্রতিবেশী ছিলেন। করাচির গার্ডেন রোডে ছিল তাদের পাশাপাশি বাড়ি। যাতায়াতের পথেই পরিচয় ও মন দেওয়া-নেওয়া।
দ্বিতীয় প্রেমিকাকে নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘ও ছিল সুন্দরী ও বাঙালি। পূর্ব পাকিস্তানে ওদের বাড়ি। আগের প্রেমের মতো এই প্রেম আমার কাছে অতটা তুচ্ছ ছিল না।’
পারভেজ মোশাররফ জানান, তার দ্বিতীয় প্রেমের সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর টিকেছিল। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরও নিয়মিত দেখা করতেন প্রেমিকার সঙ্গে। এমনকি সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হওয়া পর্যন্ত সম্পর্কে ছিলেন।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরও পারভেজ মোশাররফের মন পড়ে থাকত নিজের পাড়ায় প্রেমিকার কাছে। তিনি জানান, প্রথম ভাগে করাচিতে ৩৬তম ‘লাইট অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফ্ট রেজিমেন্ট’-এ প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন, যাতে প্রেমিকার কাছ থেকে খুব দূরে কোথাও না যেতে হয়।
পারভেজ মোশাররফ লেখেন, ‘কেন সেনা প্রশিক্ষণের জন্য করাচিকে বেছে নিয়েছিলাম আমি? না, তার কারণ আমার পরিবার নয়। এটা ছিল ওই বাঙালি কন্যার জন্য। ও ওখানে থাকত তাই…।’
বাঙালি তরুণীর সঙ্গে প্রেম করতে গিয়ে ধরাও পড়েন পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান। তিনি লেখেন, ‘ওর (প্রেমিকা) মা আমাদের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করেন। কারণ, ও পড়াশোনায় ক্রমশ অমনযোগী হয়ে পড়েছিল।’
প্রেম কীভাবে শেষ হয়েছিল, তা জানাতে গিয়ে পারভেজ মোশাররফ উল্লেখ করেন, তার দ্বিতীয় প্রেমের ‘সমাপ্তি’ হয়েছিল ‘আকস্মিক’ ও ‘অপ্রত্যাশিত’। আত্মজীবনী গ্রন্থে লেখেন, ‘সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, মেয়েটির পরিবার আচমকা পূর্ব পাকিস্তান চলে গেল। আর সেখানেই শেষ হলো প্রেম।’