ঢাকা: বিমান বন্দরের আকাশ-বাতাস তখন তোপধ্বনিতে কাঁপছে। একেক করে ২১ বার সে শব্দ যখন ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলছে ততক্ষণে ‘রাজদূত’ (ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজ)’র খোলা দরজা থেকে বেরিয়ে এলো দৃপ্ত এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সুঠামদেহী। সাদা পাঞ্জাবি, চুড়িদার সাদা পাজামা আর নিল আকাশি কটি। মাথায় ধবধবে সাদা চুল উড়ছে বিমানবন্দরের খোলা হাওয়ায়। ঢাকায় নরেন্দ্র মোদিকে প্রথম এভাবেই দেখা গেলো।
হাত তুলে শুভেচ্ছা জানালেন। এরপর একটু একটু করে নেমে এলেন সিঁড়ি বেয়ে। নিচে লালগালিচা পেতে, ফুল হাতে ছোট্ট একটি শিশুকে নিয়ে অপেক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্যামলিমা বাংলার সবুজ জমিনের শাড়ি পড়ে তারও এক দৃপ্ত অভিব্যক্তি। অতিথি বরণের আন্তরিকতাভরা অপেক্ষা।
নেমে এলেন মোদি। পা ফেললেন লাল গালিচায়। তখনও তোপধ্বনি বাজছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে গেলেন। করমর্দন হলো দুই নেতার। ছোট্ট শিশুটি ফুল তুলে দিলো নরেন্দ্র মোদির হাতে।
অনেকটা ঝুঁকে পড়ে সেই ফুল নিয়ে, শিশুটির গালে হাত বুলিয়ে দিলেন। ‘কৃপা’ নামের এই শিশুটির সঙ্গে কি যেনো বললেনও তিনি। কয়েক সেকেন্ড কথা বলে মাথা তুললেন মোদি। তখনও তার আশির্বাদের হাত শিশুটির মাথায়।
এরপর পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী। দু’জনে মিলে হাত নাড়লেন অপেক্ষমান সবার উদ্দেশ্যে।
এরপর লালগালিচা ধরে এগিয়ে গেলেন দুই নেতা। অদুরেই মঞ্চ প্রস্তুত। সেখানে পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা, তিন বাহিনীর প্রধানরা, দুই দেশের কূটনীতিকরা।
দুই নেতা মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন। বেজে উঠলো দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। মাথার ওপর তখন পত পত করে উড়ছে লাল-সবুজ আর তে-রঙ্গা পতাকা।
সামনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সুসজ্জিত চৌকস দল। তাদেরও দৃপ্ত অপেক্ষা অতিথির সামনে সম্মান প্রদর্শনের। ডাক এলো প্যারেড ঘুরে দেখার। দৃপ্তপায়ে এগিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদি। বিউগলে বাজছে সুর। রনসঙ্গীত আর দেশের গান। সঙ্গে দ্রিম দ্রিম ঢাকের শব্দ।
সেই শব্দের তালে তালে মোদির এগিয়ে চলা। ঘুরে দেখলেন গার্ড। সম্মানিত হলেন। বাজনা থেমে গেলে আবার দৃঢ়পায়ে উচ্চশিরে এগিয়ে মঞ্চে দাঁড়ালেন। স্যালুট গ্রহণ শেষে শেষ হলো সে আনুষ্ঠানিকতা।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিথিকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন টারমাকে অপেক্ষমান গাড়ির বহরের দিকে। তার আগে পরিচয় করিয়ে দিলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে। গাড়িতে তুলে দিলেন অতিথিকে।
কিছুক্ষণেই গাড়ির বহর এগুতে শুরু করলো গন্তব্য সাভার স্মৃতিসৌধ। জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
সংক্ষিপ্ত অথচ এক তেজদীপ্ত, আনন্দঘন, আন্তরিকতায় ভরা এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই শুরু হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুই দিনের ঢাকা সফর।
দারুন ব্যস্ততায় কাটবে তার দুটো দিন। বন্ধুত্ব দৃঢ় করে তোলার লক্ষ্যে এই সফরকে একটি মাইল ফলক হিসেবেই ভাবা হচ্ছে। উদীয়মান বিশ্বশক্তি আর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বন্ধু আর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় থাকবেন ৩৪ ঘণ্টা।
রোববার রাত সোয়া ৮টায় তার দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।