যে কারণে হেরে গেল মরক্কো

Slider খেলা

দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ জয়ের অভিযানে এবার মুখোমুখি লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। প্যারিস সঁ জরমঁ-র দুই বন্ধুর ওই দ্বৈরথ নিঃসন্দেহে কাতার বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে মরিয়া মেসি। টানা দ্বিতীয়বার কাপ জিততে বদ্ধপরিকর এমবাপ্পে।

মরক্কোর লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। সমস্ত সমীকরণকে ভ্রান্ত পরিণত করে আশরাফ হাকিমিরা সেমিফাইনালে উঠেই মন জয় করে নিয়েছে বিশ্বের। কিন্তু এ-ও মানতে হবে, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ফ্রান্সের মতো দলের বিরুদ্ধে লড়াই করার দক্ষতা এখনো অর্জন করতে পারেনি হাকিম জিয়েশরা। এবারের বিশ্বকাপের সেরা কোচ নির্বাচন নিয়ে ভোটাভুটি হলে সমর্থন থাকবে দিদিয়ে দেশঁ-র দিকেই। মাথা ঠান্ডা রেখে যেভাবে বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন ফরাসি তারকা দলকে চালনা করে চলেছেন, তা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়।

ঠিক যেমন অবাক করে দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের তারকা কোচেদের থেকে বহু যোজন দূরের এক মুখ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই। কাতার বিশ্বকাপের আগে ক’জনই বা জানতেন তার নাম! উল্টা মরক্কো যে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলে ফেলবে, সেটাই কেউ কল্পনা করার সাহস দেখাননি। বলা যায়, সকলের চোখের আড়ালে এমন একটা দল তৈরি করেছে ওয়ালিদ, মাঠে যারা সিংহের বিক্রম নিয়েই খেলে।

কিন্তু বুধবারের শেষ চারের দ্বৈরথ স্পষ্ট করে দিলো, আবেগ বা শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে ম্যাচ জেতা যায় না। প্রয়োজন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের। দরকার সুনির্দিষ্ট কৌশলের। ওই জায়গাতেই মরক্কো পিছিয়ে গেল ফ্রান্সের কাছে। ম্যাচের ৫ মিনিটে থিয়ো হের্নান্দেসের গোলই ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিলো। নিজেদের অর্ধের মাঝমাঠ থেকে বলটা তৈরি করে দিল ভারান। ওই বল এলো এবারের বিশ্বকাপের নিঃশব্দ ঘাতক গ্রিজম্যানের কাছে। আলতো টোকায় ও বলটা দিল এমবাপ্পেকে। ফরাসি তারকার শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ছিটকে চলে গেল বাঁ দিক থেকে উঠে আসা থিয়োর কাছে। প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার এসি মিলান ডিফেন্ডার বাঁ পা অনেকটা তুলে বলটা ঠান্ডা মাথায় গোলে রেখে দিলো। গোটা মরক্কো রক্ষণ অবাক হয়ে তা দেখল।

মরক্কো এখন পর্যন্ত নিজেদের রক্ষণ সুরক্ষিত রেখে যে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলে আস্থা রেখেছিল, সেই দর্শনের কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৫-৪-১ ছকে দল সাজিয়ে সেটাই ফের দেখিয়ে দিয়েছিল রেগ্রাগুই। কিন্তু ও এও ভুলে গিয়েছিল উল্টা দিকে এমন এক ব্যক্তিত্ব দাঁড়িয়ে, যার কাছে এই রক্ষণ ভাঙার অস্ত্রও রয়েছে।

এর আগের ম্যাচগুলোতে বারবার বাঁ দিকের উইং ধরে আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছে এমবাপ্পে। বুধবার দেশঁ ওই পরিকল্পনাটা আমূল বদলে দিলেন। বাঁ দিক থেকে ক্রমাগত ওভারল্যাপ করে দীর্ঘদেহী থিয়ো চাপে রাখল হাকিমি আর দারিকে। চোটের জন্য সাইস উঠে যাওয়ায় সুবিধা হয়ে গেল ফ্রান্সের। মাঝখান থেকে মরক্কোর গোলের মুখ খোলার দায়িত্ব গ্রিজম্যানের সাথে ভাগ করে নিলেন এমবাপ্পে। উপর দিকে একা থাকল জিহু। তাতেই বাজিমাত।

৭৯ মিনিটে বদলি হিসেবে কোলো মুয়ানি মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করে ফ্রান্সের ফাইনালের ছাড়পত্র নিশ্চিত করে দিলেন। বক্সের মধ্যে তিনজনকে কাটিয়ে শট নিল এমবাপ্পে। তার শট প্রতিহত হয়ে গেল কোলো মুয়ানির সামনে। ২-০ করতে সমস্যা হয়নি তার।

জিয়েশরা যে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হবে, তা ধরতে দেরি হয়নি দেশঁ-এর। ভারান এবং কোনাতেকে মাঝে রেখে ফ্লানেলের মতো রক্ষণকে আকার দিলেন কুঁদে আর হের্নান্দেস। মাঝমাঠ থেকে নেমে এসে রক্ষণের জোর বাড়ালেন ফোফানা। একটা সময় আক্রমণে সাতজনকে ওপরে এনেও মরক্কো আটকে গেল ওই জালে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *