ঢাকায় আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই বিএনপির। দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামে এ বিষয়ে কখনো কোনো আলোচনাও হয়নি বলে জানা গেছে। নেতারা বলছেন, ঢাকার সমাবেশে বিপুল সমাগম ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতারা একেক সময় একেক ধরনের প্রপ্রাগান্ডা চালাচ্ছেন। তারা সমাবেশস্থল নিয়ে যেমন রাজনীতি করছেন, তেমনি বেগম খালেদা জিয়াকে সমাবেশে আনা হবে এমন ‘ভিত্তিহীন’ অনুমান করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকার সমাবেশ নিয়ে তাদের ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা নেই। এটি অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মতোই একটি সমাবেশ।’ তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না কেন সরকারি দল ও কিছু মিডিয়া বেগম খালেদা জিয়াকে সমাবেশে নিয়ে আসা হবে এমন কথা বলছে। দলের স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠকে এমন আলোচনা হয়নি এবং এমন কোনো পরিকল্পনা কখনো করাও হয়নি।’
বেগম খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের করে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে নিয়ে আসা হবে, এমন কথা কিছু দিন ধরেই রাজনীতিতে আলোচনা হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে বিএনপির দুই একজন নেতার উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে মূলত এমন আলোচনার সূত্রপাত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির এমন কোনো পরিকল্পনা নেই, এমনকি দলীয় কোনো পর্যায়ের কোনো বৈঠকে এরকম কোনো আলোচনা কিংবা প্রস্তাবও আসেনি। তবে সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতারা বেগম জিয়াকে সমাবেশে আনার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যাচ্ছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া দণ্ড ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তিনি আদালত থেকে কোনো জামিন পাননি। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির জনসভায় যাওয়া না যাওয়ার আলোচনা অবাস্তব ও অলিক চিন্তা। যদি এরকম চিন্তা বিএনপি করে থাকে তা হলে সরকার তাকে কারাগারে পাঠাতে বাধ্য হবে। গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, যদি খালেদা জিয়া বিএনপির সমাবেশে যোগ দেন, তা হলে আদালত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বৃহস্পতিবার বলেন, বেগম জিয়া অসুস্থ, পরিবারের এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে বাসায় থাকতে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদি তিনি সমাবেশে যোগ দেন, তাহলে পরিবারের সেই আবেদন ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, বেগম জিয়ার সমাবেশে যোগ দেয়ার বিষয়টি মিডিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। দলের দায়িত্বশীল কোনো নেতা এমন বক্তব্য দেননি।
তিনি বলেন, আমরা আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করবো। সেই সমাবেশে বিপুল সমাগম নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপির সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে ভণ্ডুল করার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা সজাগ রয়েছেন।
দেশে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া। শর্ত ছিল বেগম জিয়াকে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, দুই. তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এই দুই শর্ত মেনেই গত প্রায় ৩৩ মাস ধরে তিনি কারাগারের বাইরে আছেন। অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিশেষায়িত হাসপাতালে।
পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, বেগম জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। শারীরিক নানা জটিলতার কারণে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়েই তিনি আছেন। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করছেন।
গত ১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। বিভাগীয় গণসমাবেশের এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে দারুণ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যেটি শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর ।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এবারের কর্মসূচি থেকে তারা আশাতীত জনসমর্থন এবং সাড়া পেয়েছে। একই সাথে এই বিভাগীয় কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সর্বস্তরে দলীয় নেতা-কর্মীরা আরো সক্রিয় এবং উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।
ঢাকার বাইরে আজ শেষ সমাবেশ হচ্ছে রাজশাহীতে। এক সপ্তাহ পর আগামী শনিবার ঢাকায় হবে গণসমাবেশ। ঢাকায় বিএনপির এই কর্মসূচি নিয়ে কিছু দিন ধরেই রাজনীতিতে উত্তাপ বইছে। বিএনপি যেখানে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, সেখানে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবেন। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি সমাবেশের নামে নাশকতা তৈরির পরিকল্পনা করছে। এ দিকে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গ্রেফতার অভিযানও শুরু হয়েছে। পুলিশ রাজধানীতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।