শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের ২২তম আসর। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে হচ্ছে এবারের আয়োজন। নতুন বিশ্বকাপ শুরুর আগে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক আগের আসরের কিছু পরিসংখ্যানের ওপর।
• বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ব্রাজিলের। বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে দেশটি অংশ নিয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি, দেশটি ১৯টি আসরে অংশ নিয়েছে। এছাড়া ইতালি ১৮টি, আর্জেন্টিনা ১৭টি এবং মেক্সিকো ১৬টি আসরে অংশ নিয়েছে।
• এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। ব্রাজিল মোট পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২ সালে দেশটি বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি ও ইতালি। দুটি দেশই বিশ্বকাপ জিতেছে চারবার করে। জার্মানি ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪ সালে এবং ইতালি ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২, ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ জেতে। দু‘বার করে জিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও উরুগুয়ে। আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে, ফ্রান্স ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে এবং উরুগুয়ে ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালে বিশ্বকাপ জেতে। এছাড়া ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড এবং ২০১০ সালে স্পেন বিশ্বকাপ জেতে।
এখনো পর্যন্ত মাত্র আটটি দেশ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে।
• গত ২১টি বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের সংখ্যা হলো ১৭। এগুলোর মধ্যে দু’বার করে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও মেক্সিকো। আর একবার করে আয়োজন করেছে উরুগুয়ে, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, চিলি, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান (যৌথভাবে), দক্ষিণ আফ্রিকা এবং রাশিয়া।
বিশ্বকাপের আয়োজক দেশই বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে এমন হয়েছে ছয়বার। উরুগুয়ে ১৯৩০ সালে, ইতালি ১৯৩৪ সালে, ইংল্যান্ড ১৯৬৬ সালে, পশ্চিম জার্মানি ১৯৭৪ সালে, আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালে এবং ফ্রান্স ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে শিরোপা ঘরেই রেখে দেয়।
• বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দু’দেশ মিলে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল ২০০২ সালে। এ আসরটি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে আয়োজন করেছিল। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডা তিনটি দেশের যৌথভাবে আয়োজনের কথা রয়েছে।
• ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৭৯টি দেশ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। ৮০তম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ খেলবে কাতার।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ক্লিনশিট রেখেছেন ইংল্যান্ডের পিটার শিলটন এবং ফ্রান্সের ফাবিয়েন বার্থেজ। দু’জনেই ১০টি করে ক্লিনশিট রেখেছেন।
• সবচেয়ে বেশি আত্মঘাতী গোল হয়েছে ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে। এ আসরে আত্মঘাতী গোলের সংখ্যা ২৭ টি।
• এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছে ১৯৯৮ ও ২০১৪ সালে। দুই আসরেই গোলসংখ্যা ১৭১টি।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। ২০০২, ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ চার বিশ্বকাপে মোট ২৪টি ম্যাচে ১৬টি গোল করেন তিনি। তিনি ২০০২ ও ২০০৬ টুর্নামেন্টে পাঁচটি, ২০১০ সালে চারটি এবং ২০১৪ সালে দুটি গোল করেন।
• বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টাইন। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে তিনি ১৩টি গোল করেন।
• এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন রাশিয়ার ওলেগ সালেঙ্কো। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে তিনি একাই ৫ গোল করেছিলেন।
• এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১২টি গোল হয়েছিল ১৯৫৪ সালের সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে। অস্ট্রিয়া সুইজারল্যান্ড ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে ৭-৫ গোলে পরাজিত করে অস্ট্রেলিয়া।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন পেলে। তিনি মোট ১০টি অ্যাসিস্ট করেছেন।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল ম্যাচ খেলা খেলোয়াড় ব্রাজিলের কাফু। তিনি তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেন। তিনি ১৯৮২, ১৯৯৮, ২০০২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ খেলেছেন।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা দল জার্মানি। দেশটি আটবার ফাইনাল খেলে চারবার শিরোপা জিতেছে ও চারবার হেরেছে।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে জার্মানি। তারা ১০৯টি ম্যাচ খেলেছে।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে ব্রাজিল। তারা ৭৩টি ম্যাচ জিতেছে।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা দল মেক্সিকো, ২৭টি।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ড্র করা দল ইতালি, ২১টি ম্যাচ ড্র করেছে দলটি।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে জার্মানি, ২২৬টি।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দলটিও জার্মানি। তারা গোল খেয়েছে ১২৫টি।
• সবচেয়ে বেশি টানা শিরোপা জিতেছে দুটি দেশ। ইতালি ও ব্রাজিল। ইতালি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে এবং ব্রাজিল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পরপর বিশ্বকাপ জেতে।
• সবচেয়ে বেশি টানা তিনটি ফাইনাল খেলেছে দুইটি দল, জার্মানি ও ব্রাজিল। জার্মানি ১৯৮২ ও ১৯৯০ এবং ব্রাজিল ১৯৯৪ ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল।
• সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন তিনজন খেলোয়াড়। আন্তোনিও কারবাজাল (মেক্সিকো, ১৯৫০-১৯৬৬), লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ১৯৮২-১৯৯৮) ও জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি, ১৯৯৮-২০১৪)।
• সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জেতা ফুটবলার পেলে। তিনি তিনবার বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিলেন ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে।
• অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তিনি আর্জেন্টিনাকে ১৬টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
• বদলি ফুটবলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন ব্রাজিলের ডেনিলসন। তিনি ১১টি ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমেছিলেন।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড দেখা খেলোয়াড় আর্জেন্টিনার জাভিয়ের মাশ্চেরানো। তিনি সাতবার হলুদ কার্ড দেখেছেন।
• বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড দেখা খেলোয়াড় ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান ও রিগোবার্ট সং। দুজনেই দু’বার করে লাল কার্ড দেখেছেন।
• দল হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার হলুদ কার্ড দেখেছে আর্জেন্টিনা। তারা ৮৮ বার হলুদ কার্ড দেখেছে।
• দল হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার লাল কার্ড দেখেছে ব্রাজিল। তারা আটবার লাল কার্ড দেখেছে।
• দুবার বিশ্বকাপ জেতা কোচ ইতালির ভিত্তরিও পোজ্জো। তিনি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপ জেতেন।
• বিশ্বকাপে দু’জন কোচ পাঁচটি ভিন্ন দেশের হয়ে পাঁচবার অংশ নিয়েছেন। বোরা মিলুটিনোভিচ ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো, ১৯৯০ সালে কোস্টারিকা, ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৯৮ সালে নাইজেরিয়া ও ২০০২ সালে চীনের কোচ ছিলেন। কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা ১৯৮২ সালে কুয়েত, ১৯৯০ সালে আরব আমিরাত, ১৯৯৪ ও ২০০৬ সালে ব্রাজিল, ১৯৯৮ সালে সৌদি আরব ও ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ছিলেন।
• সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ অটো রেহেগাল। ২০১০ বিশ্বকাপে তিনি অংশ নেন। তখন তার বয়স ছিল ৭১ বছর ৩১৭ দিন।
• খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে দু’জন ব্যক্তি বিশ্বকাপ জিতেছেন। পশ্চিম জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার একমাত্র ব্যক্তি যিনি অধিনায়ক (১৯৭৪) ও কোচ (১৯৯০) হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন। মারিও জাগালো (ব্রাজিল) একমাত্র ব্যক্তি যিনি চারবার বিশ্বকাপ জিতেছেন। দু’বার খেলোয়াড় হিসেবে (১৯৫৮ ও ১৯৬২), একবার কোচ (১৯৭০) এবং একবার সহকারী কোচ হিসেবে (১৯৯৪)।