কমছে তাপমাত্রা বাড়ছে শীত, বাড়ছে শীতজনিত রোগ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে ক্রমশই কমছে তাপমাত্রা। গত তিনদিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাবে হালকা শৈত্য প্রবাহ। সেই ক্ষেত্রে তাপমাত্রা নামে যাবে ১০ ডিগ্রির নিচে।

এদিকে তাপমাত্রা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীত। শীতের সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট সহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালমূখী হচ্ছেন অনেকেই। অবশ্য হাসপাতালে আসা রোগীদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। খুব কম সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে এখন প্রতিদিনই ২শ’ থেকে ৩শ’ রোগী আসছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। উপজেলার অন্য হাসপাতালেও একই অবস্থা বলে জানা গেছে। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমজীবি মানুষের কাজের পরিধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। নদীর পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করা শ্রমিকরা পড়েছে বিপাকে। তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া গ্রামের পাথর শ্রমিকরা জানায়, তারা সারা বছরেই মহানন্দা নদী থেকে পাথর সংগ্রহের কাজ করে আসছে। শীত মৌসুমের ৩ মাস নদীর পানি বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যায়, বেশিক্ষন পানিতে থাকা যায় না। বেঁচে থাকার তাগিদে কষ্ট সহ্য করেই কাজ করতে হয়।

তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র শাহা বলেন, এই উপজেলার মানুষদের প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করেই জীবন চালাতে হয়, দূর্যোগকালীন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরেই আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়ে থাকে। এ বছরেও আমরা কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি রেখেছি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে চলতি শীত মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। এর আগে বুধবার ১৩ দশমিক ৩ এবং মঙ্গলবার ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও নিচে নামতে শুরু করেছে।

এদিকে সরেজমিন সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহিঃর্বিভাগে প্রচুর রোগিী আসছেন। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও আসছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক আবুল কাশেম জানান, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে ভাইরাসজনিত রোগে শিশুদের সঙ্গে বয়স্ক মানুষরাও আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে ঠান্ডাজনিত সমস্যাও বাড়বে। আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। বিশেষ করে শিশুর দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মনোয়ার হোসেন জানান, পঞ্চগড়ে ডায়রিয়া ও নিউমনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নিতে আসছে। আউটডোরের রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই নিজ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এর মধ্যে যারা বেশী অসুস্থ্য তাদের ইনডোরে পাঠানো হচ্ছে। আমরা যথাযথ তাদের সুস্থ্য রাখতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা তাদের সচেতন করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *